Code

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

Second Header

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

Friday, January 13, 2017

যাযাবর- ষষ্ঠ পর্ব (নিউ হ্যাম্পশায়ার- দ্বিতীয় সংখ্যা)


আমাদের যাত্রা শুরু করেছিলাম কানেক্টিকাট থেকে। এই রাজ্যের অন্যতম আকর্ষণ হল হার্টফোরড শহর। বেশ পুরনো দিনের শহর এটি, এবং বেশ কিছু নামী আন্তর্জাতিক সংস্থার মুখ্য দপ্তর এই শহরে অবস্থিত। নদীর পাশে জেগে ওঠা এই শহরের রাত্রি বেলার রোশনাই দেখার মতো। এই শহরের রাস্তা ঘাট তুলনামূলক ভাবে অন্যরকম। মূল শহরের মধ্যে বসতি তেমন ভাবে নেই, শুধুই হোটেল ও কার্যালয়। শহুরে পথ দিয়ে যাবার সময় চোখে পড়ল, সুউচ্চ কাঁচের আরশি দেওয়া অট্টালিকার সারি, যার বুকে ঠিকরে পড়ছে মেঘলা দিনের হাল্কা রোদ্দুর।





কোলকাতার এসপ্ল্যানেড মোড়ের কথা আমার খুব মনে পড়ে। রঙিন সব কাপড়ের দোকানের সারি, ট্রামলাইন, দোকানীর দরদাম, ফুচকা চাট, ফাস্ট ফুডের সম্মোহনী সুবাস, মোড় ঘুরতেই হঠাৎ কোনও বাড়ির সিঁড়ি যা উঠে গেছে কোনও অফিস ঘরের ভেতর, ব্যাগ হাতে মুচকি হেসে প্রিয় মানুষটিকে বলা, "আচ্ছা ঐ দোকানে তো যাওয়াই হল না। চলও, তাহলে ঐ দিকেই যাই... তুমি মানা করবে না কিন্তু"। এই শহরের মোড়গুলোও অনেকটা এমনই। উত্তর কোলকাতার অধিবাসী হওয়ায়, নস্টালজিক হয়ে পড়াটা আমার স্বভাবগত দোষ, কিন্তু বিদেশের মাটিতেও যখনই চোখের সামনে ধরা পড়েছে কোনও জনপদ, কেন জানিনা বারবার আমার মন অজান্তেই টুকরো টুকরো স্মৃতির মধ্যে আমার শহরের সাদৃশ্য খুঁজে বেড়িয়েছে। আসলে, কোনও জিনিসের প্রতি টান থাকলে, আমাদের মন হয়ত এভাবেই নতুন কিছুর মধ্যে "পুরাতনী" কে মিলিয়ে দিতে চায়।



আর এই শহর যখন গাড়ির লুকিং গ্লাসে ধীরে ধীরে দূরত্বের সাথে মিলিয়ে গেল, তখন সিনেমার রিলের মতো একের পর এক দৃশ্য এসে উপস্থিত হল চোখের সামনে। যে হাইওয়ে দিয়ে যাচ্ছিলাম তা কখনও হেলে আসা পাহাড়ের প্রাচীর সমান দেওয়ালের গা ঘেঁষে ছুটছিল, কখনও বাঁক ঘুরতেই স্পর্শ করে যাচ্ছিল কোনও গভীর উপত্যকা যার অধিকাংশ অংশই কুয়াশায় ঘেরা, কখনও সেই রাস্তা নিয়ে যাচ্ছিল কোনও ক্ষুদ্র জনপদে, কখনও বা হৈ হৈ করে এগিয়ে চলেছিল কোনও হ্রদের ধার দিয়ে। আগেই বলেছি, এই বারের বেরিয়ে পড়ার মূল উদ্দেশ্যই হল- যাযাবরের মত উদ্দেশ্য আর গন্তব্যের আকর্ষণ ছাড়িয়ে শুধু প্রকৃতিকে নিরীক্ষণ করা। আমার খুব মনে আছে সেই দিনগুলোর কথা, যখন আমি শহরের দিনগুলোকে বিদায় জানিয়ে চলে যেতাম আমার গ্রামের বাড়িতে। হাওড়া জেলার খুব প্রত্যন্ত এক গ্রাম। হয়তও নাম বললে, খুব কম মানুষই বলতে পারবে তার সাকিন ঠিকানা। বহুবার গেছি, বহু দিন কাটিয়েছি সেইখানে, কিন্তু যতবার গেছি ততবার নতুন কিছু দেখেছি। কারণটা কেউ অনুমান করলে আমি কিন্তু খুব খুশি হব। আচ্ছা বলেই দি, তাহলে। আসলে কারণ হল "সবুজ"। আমাদের গ্রাম বাংলার প্রকৃতি সবুজের অলংকারে সবসময়ই নতুন সাজে সেজে ওঠে। পুকুরের ধার দিয়ে উঠে আসা পাতিহাঁসের দল, বাঁধানো ঘাটের কাছে দাঁড়িয়ে জল মাকড়সা দেখতে থাকা ডানপিটে মেয়ে, পিঠে ঘুড়ি বেঁধে খালি পায়ে সবুজ ক্ষেতের আলের মধ্যে দিয়ে দৌড়ে যাওয়া ছেলের দল, কিম্বা সূর্যাস্তের সময় মানুষ-সমান লম্বা ঘাস বনের মধ্যে দিয়ে ভেসে আসা মিঠে হাওয়া, বৃষ্টির দিনে ঘরফেরা গরুর খুড়ের দাগে বসে যাওয়া মাটির রাস্তা, কিম্বা আমবাগানের ছায়ায় বসে ঝগড়ায় মত্ত শালিকের দল। প্রতিবার নতুন কিছু দেখেছি, পল্লী প্রকৃতির বুকে এবং তার সাথে মিশে থাকা জনজীবনে। ঠিক একই কারণে, আমি যতবারই পাহাড়, নদী, জঙ্গল ঘুরে থাকি না কেন, প্রতিবারই যেন নতুন লাগে। সবুজ যতই "সবুজ" হোক না কেন, প্রতিবার যেন সে আলাদা।





নিউ হ্যাম্পশায়ার রাজ্যের ভিতরে আরও উত্তরের দিকে তখন এগিয়ে চলেছি। আর তার একটা উদ্দেশ্য হল, মাউন্ট ওয়াশিংটন পৌঁছানো। এই রাজ্যের অন্যতম দর্শনীয় স্থান হল এই পাহাড়। সত্যি বলতে, আমাদের দার্জিলিঙের উঁচু পাহাড়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সাথে এর কোনও তুলনাই চলে না। কিন্তু এই পাহাড়ের অন্যতম আকর্ষণ হল ১২৫ বছরের ঐতিহ্য পূর্ণ Cog Railway (www.thecog.com)। দার্জিলিঙের টয় ট্রেনের সঙ্গে সাদৃশ্য থাকলেও এই রেলগাড়ির যাত্রা এক্কেবারে অভিনব ও রোমাঞ্চকর। আমার দার্জিলিং যাবার সৌভাগ্য কোনোদিনও হয়নি; কিন্তু ছবিতে, গল্পে, ভ্রমণ কাহিনীতে, সিনেমার পর্দায় বহুবার শহরকে দেখেছি। দেখেছি "কু-ঝিক ঝিক" রেলগাড়ির যাওয়া আসা। হয়তও একদিন নিশ্চয় পৌঁছাতে পারবো ঘুম স্টেশনের কাছে, যেখানে কবে যেন মনের অজান্তে রেখে এসেছিলাম "চল ঘুরতে যাই"-এর ইচ্ছে। কথায় আছে "সাধ"। এই সাধ এমনই জিনিস যা এমনকি শেষ নিঃশ্বাসের আগের মুহূর্ত পর্যন্ত তাড়া করে। আমারও অনেকটা এমনই কিছু সাধ আছে, যা অন্তত মেটাতেই হবে। আর সেই সাধেরই কিছুটা পূরণ হল মাউন্ট ওয়াশিংটনে এসে। আসলে নিয়ম মাফিক কোনও গন্তব্য না বেছেই ছলে এসেছিলাম এই পাহাড়ের পাদদেশে। কিন্তু সেখানে এসে জানতে পারলাম এই পাহাড়িয়া রেলগাড়ির গল্প, যা নাকি স্থানীয় মানুষের কাছে ভীষণ আদরের জিনিস।



রেলগাড়ি চড়ে সেই পাহাড়ের চুড়ায় পৌঁছানোর গল্প, তুলে রাখলাম আগামী পর্বের জন্য....

আপনাদের এরকম কোনও ভ্রমন অভিজ্ঞতা থাকলে অবশ্যই লিখে পাঠান আমাদের ডাকবাক্সে (info.amarbanglavasa@gmail.com) ছবি সহ।

ধন্যবাদান্তে,
সম্পাদক-নবপত্রিকা

No comments:

Post a Comment