Code

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

Second Header

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

Thursday, November 3, 2016

যাযাবর- পঞ্চম পর্ব (ওয়াশিংটন ডিসি- প্রথম সংখ্যা)

বাসের জানালার সিট কার না প্রিয়? সেই কোন ছোটবেলা থেকে বাসে-ট্রামে যখনই উঠেছি, মন করেছে সেই সিটে কখন একবার বসা যায়। আমাদের মন কখনও আবদ্ধ থাকতে চায়না। আর সেই জন্য ওই জানালাটাই গন্তব্যে পৌঁছানোর আনন্দের থেকেও আরও বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। একমুঠো বাতাস, আর শহরের বুক বেয়ে এগিয়ে চলা রাস্তার ছবি, যা গতির সাথে ক্রমাগত পিছিয়ে যেতে থাকে। একই রাস্তা, একই জায়গা, একই গন্তব্য তবুও যেন আশ মেটে না; তার হয়তও একটাই কারণ- তন্ন তন্ন করে আমরা "নতুন" কিছু খুঁজি আমাদের "চেনা" সব কিছুর মধ্যে। নতুন মানেই তো সবুজ, নতুন মানেই তো ইচ্ছে, নতুন মানেই তো জীবনের স্বাদ। আচ্ছা, কখনও ইচ্ছে হয়েছে পায়ে হেঁটে রমণীয় কোলকাতার আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়াতে? বাগবাজারের ব্যোম কালীতলার মন্দির, স্টেশনের ধারে মায়ের ঘাট, নিঝুম কুয়াশা ঘন ভোরে জেটিঘাটে বসে এক কাপ উষ্ণ চা, কিম্বা চলতে চলতে ট্রামলাইনের আঁকিবুঁকি? অথবা নবরুচির জলখাবার খেয়ে হাঁটা পথে শোভাবাজারের ব্যস্ত বাজারের পথ? আমাদের শহর কেন্দ্রিক জীবনে এমন অনেক ছোট ছোট ভালোলাগা আছে, যা হয়তও কাছ থেকে না দেখলে, বৃথা। তাই যখন ভীষণ মন করেছে, বাসের জানালায় বসে দেখা শহরটাকে আরও কাছে টেনে নিতে, আমি নেমে এসেছি রাস্তায় আর যাযাবরের মতো পায়ে হেঁটে ঘুরে বেরিয়েছি আমার উত্তর কোলকাতার এখান সেখান।

এইবারে যে শহরটায় গেছিলাম, সেইখানে গিয়ে তাই সব চেয়ে বেশি মনে পড়ল আমার নিজের শহরের কথা। মার্কিন মুলুকে অধিকাংশ শহরই তার জাঁকজমক ও দর্শনীয় স্থানের জন্য বিখ্যাত। তবে এই শহরটি এই দেশের বুকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্বেও একেবারেই আলাদা। এই শহর আপনাকে বাধ্য করবে "পায়ে পায়ে" নানান প্রান্ত ঘুরে দেখতে। ছোট ছোট প্রান্ত, পাড়া, অলিগলি, সুসজ্জিত রাস্তা যা সত্যিই পায়ে হেঁটে না দেখলে তার আকর্ষণ অনুভব করা যাবে না। আর হয়তও এই কারণেই আমার "কোলকাতা -ময়" সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল, যখন সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়তাম আমার আশেপাশের "নতুন" কিছুর খোঁজে। 


গত দিনের আলোচনা পড়ে, যদি কোনোভাবে মনে হয়, "এই অরণ্য বিলাসী" মানুষটি হঠাৎ কেন শহরের খোঁজে ঘরছাড়া হয়ে গেল এত তাড়াতাড়ি, তবে সেই কৌতূহল নিরসন করতে শুধু একটা কথাই বলব, "সৌন্দর্য"। এই শহর বিশ্ব রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে সদর্পে। খাস মার্কিন মুলুকের রাজধানী, ওয়াশিংটন ডিসি (Washington, D.C.)। এই রাজধানীর আনাচে কানাচে ঘুরে কেটে গেল একটা সুন্দর রোদ্দুরভেজা দিন। পায়ে পায়ে সেই অলিগলি ঘোরার গল্পই এবার শোনাবো সবার কাছে।আজ প্রথম সংখ্যা।


প্রায় দুপুর দুপুর যখন পৌঁছলাম একটা জায়গায়, যাকে এই শহরের প্রাণকেন্দ্র বলা যেতেই পারে। United States Capitol। এই ইতিহাস খ্যাত বাড়িটির গুরুত্ব বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতিতে ব্যপক। এটিই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক দপ্তর, যেখানে  United States Congress এর আসন আছে। শুধু মার্কিন প্রেসিডেন্ট নয়, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনেতারাও এই দপ্তরে সম্বর্ধনা গ্রহণ করে স্বাগত ভাষণ রেখেছেন। এই দপ্তরের কার্যকারিতার সাথে আমাদের ভারতীয় পার্লামেন্টের তুলনা চলতে পারে। শুভ্র এই প্রকাণ্ড প্রাসাদোপম বাড়ির ওপর যখন হেলানো রোদ্দুর এসে পড়ছিল, তখন মনেই হয়নি গাছের ছায়ায় বসে কিভাবে অনেকক্ষণ কেটে গেছে। তথ্য হিসাবে বলে রাখতে চাই, এই বাড়ির অধিকাংশ অংশই সাধারণ মানুষের জন্য বন্ধ,নিরাপত্তার কারণে।


এই শহরের সব চেয়ে বড় চারটি স্থাপত্য হল, United States Capitol, Washington Monument, World War II Memorial এবং Lincoln Memorial। এবং এই চারটি স্থাপত্য তাদের ঐতিহাসিক গুরুত্বের কারণে "একই সরল রেখায় অবস্থিত"। তাই United States Capitol এর সামনে থেকে বাকি তিনটি স্থাপত্যকে সোজাসুজি দেখা যায়, যা সত্যিই বিস্ময় জাগায়।


United States Capitol এর সামনে থেকে এবার এগোতে থাকলাম Washington Monument এর দিকে। এবং সেই চলার পথে বেশ কিছু এমন জিনিস চোখে পড়ল, যা লক্ষণীয়। এই শহরের পথে যেটা ভীষণ চোখে পড়ে, তা হল বিভিন্ন ঐতিহাসিক ভবন ও মিউজিয়াম। ইতিহাস, বিজ্ঞান, ভূগোল ও মহাকাশ বিদ্যা, কলা ও শিল্প, ভাস্কর্য এই প্রত্যেক বিষয়ের আলাদা আলাদা জাদুঘর ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এই শহরের বুকে। 



এখানকার রাস্তা, মোড়, পথচারীদের চলার জায়গা সবকিছুই বেশ শহুরে ভাবনার থেকে আলাদা, বরং অনেক বেশি শৈল্পিক। সাধারণত বেশিরভাগ শহরের রাস্তা কোণাকুণি বিস্তৃত থাকে, কিন্তু এখানে তার অধিকাংশই তির্যক! যাকে বলে, সোজা রাস্তা মেলা ভীষণ ভার।বাসভবনের সংখ্যা মূল শহরের বুকে কম হলেও, সেখানে ক্যাথলিক চার্চএর শিল্প শৈলীর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। এই দেশে খুব চলতি কথা হল Uptown and Downtown। Uptown এর অর্থ সাধারণত নিরিবিলি পাহাড়ি এলাকা, যেখানে বসতি বেশ কম। তবে Downtown বেশ জাঁকজমক পূর্ণ শহর হয়, কারণ সেখানেই নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় সবকিছু মেলে। এই শহরের Downtown এই আমি এসেছিলাম।



বেলা গড়াতে যখন শুরু করল, তখন এইভাবে ঘুরতে ঘুরতে, এক সময় চলে এলাম এক পার্কে; শহরের উপকণ্ঠে এক সুদৃশ্য বাগান। আর.....................

হ্যাঁ, গল্প আড্ডা আর জানার অনেক কিছু আরও আছে। তবে আজ এই সংখ্যায় এই টুকুই। কেমন ছিল সেই পার্কের নানান প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা শিল্প ভাস্কর্য? কেমনি বা ছিল সেই পায়ে পায়ে Washington Monument পৌঁছে যাবার অভিজ্ঞতা? জানতে গেলে চোখ রাখতে হবে আগামী সংখ্যায়। 

আপনাদের এরকম কোনও ভ্রমন অভিজ্ঞতা থাকলে অবশ্যই লিখে পাঠান আমাদের ডাকবাক্সে (info.amarbanglavasa@gmail.com) ছবি সহ।

ধন্যবাদান্তে,
সম্পাদক-নবপত্রিকা

No comments:

Post a Comment