Code

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

Second Header

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

Sunday, November 13, 2016

যাযাবর- পঞ্চম পর্ব (ওয়াশিংটন ডিসি- দ্বিতীয় সংখ্যা)


গল্পটা যেখানে অপূর্ণ রেখেছিলাম, সেখান থেকেই আবার শুরু করছি। আজ দ্বিতীয় সংখ্যা


দুপুরের রোদ্দুর মেখে ঘুরে দেখছিলাম বিশ্ব রাজনীতির রাজধানী Washington, D.C. । বিগত বেশ কয়েকদিনে আমার, আপনার পাশাপাশি গোটা বিশ্বের চোখ ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ওপর। আর সেই সূত্রেই বলতে চাই, যে শহরের বুকে সেই ক্ষমতার অলিন্দ অবস্থিত, তারই নাম Washington, D.C। হয়তও এই কথাটার পর এই শহরের ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক গুরুত্ব আঁচ করাই যেতে পারে। তবে এ শুধুই রাজনীতি-বাণিজ্য আর ক্ষমতার দর্প দেখানোর শহর নয়, বরং এই শহর প্রেমের, ঐতিহ্যের, কলা ও শিল্পের, বিজ্ঞান ও আধুনিক জীবন চর্চার। নানান স্থাপত্য ও কারুকার্যে মোড়া এই শহরের বিভিন্ন প্রান্ত।



হাঁটতে হাঁটতে এসে পৌঁছেছিলাম একটি সুদৃশ্য বাগানে। সুন্দর সুসজ্জিত এই বাগানের নানান প্রান্তে রয়েছে শৈল্পিক ভাস্কর্য। আর একেবারে মধ্যস্থলে আছে একটা সুন্দর ফোয়ারা, যেখানে সময়ের সাথে সাথে তার আকার পরিবর্তিত হয়ে যায়। আমার মনে আছে এমন অনেক বিকেলের কথা, যখন গঙ্গার ঘাটে জলের মধ্যে পা ডুবিয়ে বসে থাকতাম, জিন্স গোটানো হাঁটু অবধি। পাশে রাখা চটি জুতো। আর এভাবেই স্রোতের আনাগোনা দেখতে দেখতে কখন সময় কেটে যেত, ভেবেই পেতাম না। জেটিঘাট, লঞ্চের মাথা থেকে ছেলেদের ঝাঁপ, সন্ধ্যের লঞ্চে ঠাসাঠাসি ভিড়, সূর্যাস্তের মিঠে হাওয়া আরও কতও কিছু থাকত মনকে আঁকড়ে রাখার জন্য। ঠিক অনেকটা সেইরকমই এখানে লক্ষ্য করলাম; দেখলাম বেশ কিছু পর্যটককে ফোয়ারার জলে পা ডুবিয়ে বসে আড্ডায় মেতে থাকতে। কারো হাতে আবার রয়েছে গল্পের বই, নেহাত অবসর কাটানোর জন্য।



এইভাবে শহর ঘুরে দেখার সাথে আমার খুব মনে পড়ে কুমারটুলির অলিগলির কথা। সাহিত্যের নিরিখে দুই সভ্যতা, দুই শহর, দুই ইতিহাস ও তার শিল্পসুলভ নিদর্শন একেবারেই আলাদা, তা সত্বেও এই তুলনা টেনে আনলাম। এই তুলনার এক ও একমাত্র কারণ হল "অনুভূতি"। এই অনুভূতি আমায় সেই পুরনো দিনগুলোর কথা ভীষণ মনে করায়। এখন আমাদের কোলকাতা শহরের বুকে ক্যামেরা পন্থী DSLR-ধারীদের খুব ভিড়, এবং মার্জনা চেয়ে আগেই বলে রাখি, আমি এই ভিড়ের মধ্যে পড়িনা। আমার কাছে ঘুরে দেখা মানে, মনের তৃপ্তি, চিত্তের অনুভব। আর সেই কারণেই খালি হাতেই বেড়িয়ে পড়তাম "নতুন" কিছু পাবার নেশায়। আঁকাবাঁকা কুমারটুলির গলিতে খুঁজে পেতাম- গুমটির টিমটিমে আলোতে তুলির আঁচড়ে ফুটে ওঠা প্রতিমার রূপ, কোথাও অসম্পূর্ণ কাঠামোয় নতুন মাটির প্রলেপ, কোথাও স্টুডিয়োতে প্লাস্টার অফ প্যারিসের তৈরি মূর্তির সারি, কোথাও ঠেলাগাড়িতে করে আনা নরম মাটির স্তূপ, কোথাও রকমারি ঠাকুর সাজানোর রং বেরঙের সরঞ্জাম, কোথাও প্যান্ডেলের কর্তাদের বায়না করার ব্যস্ততা, কোথাও কাঁধের ওপর বসানো প্রতিমা, কোথাও বা তুলি কলম হাতে বাবার পাশে বসে মন দিয়ে "ঠাকুর গড়া" দেখতে থাকা খুদে-শিল্পী। এক কথায় বলতে গেলে, কিছু জিনিস এই জীবনে সত্যিই ক্যামেরার লেন্সে বন্দী করা যায়না। আর ঠিক সেই রকম অনুভূতির সন্ধান পেলাম এই শহরের বুকে "চলতে চলতে"।


আমার খুব ভালো লাগে শহরের বুকে একমুঠো সবুজের আহ্বান। গড়ের মাঠ যেমন কোলকাতার ফুস্ফুস, ঠিক অনেকটা সেই রকম ঘন সবুজ প্রান্তর চোখে পড়ার মতো বিভিন্ন দিকে, এই শহরের বুকেও। এ যেন, আধুনিক নগরজীবনের মধ্যেও সবুজের নিঃশ্বাস। সেই সবুজ মাঠের ধার দিয়ে রয়েছে বাধানো রাস্তা। বাগান থেকে বেড়িয়ে সেই রাস্তা ধরেই হাঁটতে শুরু করলাম। এভাবে চলতে চলতে এসে পৌঁছলাম সেই বাড়ির সামনে, যা হল মার্কিন রাষ্ট্রপতির বাসভবন। White House। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বেষ্টনীতে মোড়া এই বাড়ির সমস্ত দিক, এমনকি সামনের গেটে সেনাবাহিনীর নিরন্তর টহল। রেলিং থেকে সোজাসুজি দেখা যায় এই বাড়ির মূল প্রবেশ দ্বার, ও সামনের সুসজ্জিত বাগান। ছোটবেলায় রাজপ্রাসাদ, সাম্রাজ্য, রাজা-রানীর অনেক গল্প শুনতাম; আর এই বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে মনে হল, "গল্প হলেও সত্যি"। প্রাসাদের থেকে কম কিছু নয় এই বাড়ি, যার সম্পর্কে সাধারণ মানুষের কৌতূহল ও রহস্য একেবারেই কম নয়। জানা যায়, এই বাড়ির বাসিন্দা ও কিছু অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছাড়া কারোর জানা নেই এর অন্তরমহলের কথা।



এই বাড়ির সামনে থেকে এবার একটু একটু করে এগোতে থাকলাম এই শহরের সেই "সরলরেখার" দিকে। সেই সরলরেখা যা ঐতিহাসিক চারটি স্থাপত্য কে সংযোগ করে। বিকেলের মিঠে আলো তখন তির্যক হয়ে এসে পড়ছে রাস্তার বুকে। কখনও গাছের আড়াল পেরিয়ে উঁকি দেওয়া বিশাল অট্টালিকা, কখনও বা ব্রোঞ্জের তৈরি মূর্তি ও ঐতিহাসিক স্মারক, কখনও বা দূর বাঁকের মধ্যে থেকে এসে পড়া সোনালি রোদ - এই সব কিছুই রেখে যাবে অজস্র ভালোলাগা। তাই Washington Monument পৌঁছানোর আগে মাঝে মাঝেই থেমে যেতে হল, মুহূর্তদের সন্ধানে।

অবশেষে এসে পৌঁছলাম সেই প্রান্তরের সামনে যার মাঝখানে আছে Washington Monument। আঁকাবাঁকা সরু পথ এগিয়ে গেছে সেই প্রান্তরের মধ্যমণির দিকে। আর......

হ্যাঁ, গল্প আড্ডা আর জানার অনেক কিছু আরও আছে। তবে আজ এই সংখ্যায় এই টুকুই। কেমন ছিল সেই Washington Monument আর সূর্যাস্তের সময় Lincoln Memorial ঘুরে দেখার অভিজ্ঞতা? জানতে গেলে চোখ রাখতে হবে আগামী সংখ্যায়।

আপনাদের এরকম কোনও ভ্রমন অভিজ্ঞতা থাকলে অবশ্যই লিখে পাঠান আমাদের ডাকবাক্সে (info.amarbanglavasa@gmail.com) ছবি সহ।

ধন্যবাদান্তে,
সম্পাদক-নবপত্রিকা

No comments:

Post a Comment