সেই যে একটা "আড্ডা" জমে উঠেছিল, মনে আছে? "কেমন আছো তুমি?" আজ সেই প্রসঙ্গে আরও কিছু কথা ভাগ করে নেওয়া যাক। ভাগ করে নেওয়া যাক, বেশ কিছু কথা, যা হয়ত আপনাকে আরেকটু ভাল থাকতে, ভাল রাখতে উদ্বুদ্ধ করবে।
কেমন করে দিন শুরু হয় আপনার? মর্নিং ওয়াক অথবা বাড়িতেই খবরের কাগজে সংবাদের নির্যাস? টিভি দেখে যোগাভ্যাস অথবা হয়ত আপনি সকাল থেকেই নিজেকে নিমজ্জিত করলেন অফিসের কাজে- ল্যাপটপে চোখ গুঁজে মেল-বক্স তন্ন তন্ন করে খুজলেন, "পাছে কোনও ঝাড় হয়নি তো আজ?" আচ্ছা এমন হতে পারে না, নিতান্ত গুরুগম্ভীর এইসব "নিয়মের বেড়াজাল" থেকে একবার ছুটি নিতে? মনে রাখবেন, মুক্তি শুধু খাঁচার পাখি চায় না, আপনিও চান। হয়ত ভোরবেলা পার্কে বসে ভাবেন "আর কতদিন এভাবে চলবে?", অথবা ট্যাক্সির পেছনের সিটে এলিয়ে গিয়ে ভাবেন "উফ! আর পারা গেল না। এই চাপ নেওয়া যাচ্ছে না"। এই ভাবনা গুলো ছাড়ুন। আর জেনে নিন কিভাবে ভাল থাকতে পারেন।
সব ভাল লাগা একদিনে নয়। এক এক দিন, এক একটা জিনিস ভাগ করে নিন। এই যেমন, রোজ সকালে যে পার্কে আপনি "হেইয়া হেইয়া" করে দৌড়াদৌড়ি আর লাফালাফি করে বেড়ান, অথবা দুহাত আকাশে তুলে চিৎকার করে জানাতে চান যে "হ্যাঁ! আমি হাসছি", সেইটা একদিন কাটিয়ে দিন। ভাবছেন সুগার- বিপি এগুলো কোথায় যাবে? ওই যে বললাম, আপনি যদি সব সময় কুলিদের মত মাথার ওপর "চিন্তার বোঝা" নিয়ে ঘুরে বেড়ান, তাহলে আপনার ডাক্তারও কিছু করতে পারবে না। তাহলে কি করবেন সেদিন পার্কে? আপনি হয়ত এই "মর্নিং ওয়াক" যে জায়গায় করতে যান, সেই জায়গাটা কি রকম দেখতে সেটাই হয়ত কোন দিন লক্ষ্যই করেননি। সেটা সেদিন মনে ভরে ঘুরে দেখুন। তবে হ্যাঁ, হাতের ঘড়িটা আর মোবাইল(সাইলেন্ট করে) মনে করে পকেটে ঢুকিয়ে নেবেন। ওটা যেন আপনার পায়ের বেড়ি না হয়ে যায়। গাছ গাছালি তো আছেই, ঘুরে দেখুন সেই সব দিক গুলো যেদিকে আপনি সচরাচর হেঁটে যাননি। ঘুরে দেখুন, আলাপ করুন সেই সব মানুষের সাথে, যারা হয়ত আপনার মতই রোজ এখানে এখানে আসে, কিন্তু একে অপরকে কোনদিন আবিষ্কার করেননি। বিশ্বাস করুন, যতই কেউ অচেনা হোক, আপনার "সুপ্রভাত"-এর জবাবে তিনিও হাসিমুখে "সুপ্রভাত"-ই বলবেন। হয়ত সেটাই হাসিমুখে নতুন কোনও বন্ধুত্বের সূচনা করল। হয়ত এভাবে মাঝে মাঝে সবার সাথে আলাপ করতে করতে মাস দুয়েক বাদে দেখলেন, আপনার বন্ধুর পরিধিটা হঠাৎ যেন বেড়ে গেছে। সত্যি বলছি! কেউ অচেনা হতেই পারে, কিন্তু সে তো বন্ধুও হতে পারে?
"কে জানে, কিভাবে কি মনে করবে? ভাববে গায়ে পড়ে আলাপ জমাচ্ছে", আপনার কুণ্ঠাবোধ হয়ত বারবার আপনার কানে ফিসফিস করছে। এই ভাবনাগুলো এখনই ঝেড়ে ফেলুন। মনের এই বন্ধ দরজাগুলো খুলে ফেলুন। দেখবেন আলো আরও বেশি করে আসছে। আপনি কি সন্ত্রাসবাদী নাকি সমাজবিরোধী? কোনটাই যদি না হন, তাহলে এক অচেনা মানুষের সাথে দিনের প্রথম লগ্নে আড্ডা মারতে অসুবিধা কি? বিশ্বাস করুন, কেউ আপনাকে ফেরাবে না। "লোকে কি ভাববে?" এই আয়নাটাকে ভেঙে ফেলুন। বারবার নিজেকে সন্দেহের আর কুণ্ঠাবোধের আরশি-তে দেখা বন্ধ করুন। দেখবেন ভাল থাকবেন।
অথবা কোনও একদিন, একটু সময় বার করে একটা গাছের ছায়ায় বসুন, অথবা বসুন পার্কের পুকুরের পাশে। না! কোনও সাংসারিক বা বৈষয়িক চিন্তা নয়, চুপচাপ নিজের নীরবতাকে অনুভব করুন। দেখবেন ভাল লাগছে। না কথা বলেও অনেক কথা শুনতে পাচ্ছেন। লক্ষ্য করুন চারপাশ। দেখবেন কত কিছু ঘটে অনবরত। চায়ের দোকানের কাছে রোজ কিছু চেনা মুখের জটলা, উনুনের ধোঁয়ায় মায়াবী কুয়াশাছন্ন সকাল, সাইকেল চালিয়ে রোজ রাস্তার ওপার দিয়ে কাজে যাওয়া ছেলের দল, ব্যাগ কাঁধে হাসিমুখে মায়ের হাত ধরে হেঁটে যাওয়া মেয়েটা, অথবা সেই কিছু "বুড়ো বন্ধু" যারা আজও ভাবে ছিপ নিয়ে বসলে মাছ উঠবে পুকুরে।
এমনি ছোট ছোট ঘটনারা ছড়িয়ে আছে আমাদের পাশে। দেখার জন্য আরেকবার চোখ খুলুন। ভাল লাগবে!
(ক্রমশ প্রকাশ্য, পড়তে থাকুন। পরবর্তী অংশ পরের প্রকাশনায়।)
ধন্যবাদান্তে,
সম্পাদক-নবপত্রিকা
সম্পাদক-নবপত্রিকা
No comments:
Post a Comment