এমন কোনও প্রবন্ধ লিখতে আমি চাইনা, যেখানে প্রথম লাইনে আমাকে লিখতে হবে, "এই বিষয় বা মন্তব্যের সাথে কোনও জীবিত বা মৃত ব্যক্তির সাদৃশ্য থাকলে তা নিতান্তই বিচ্ছিন্ন ঘটনা মাত্র"। লেখা তো বাস্তব জীবনের আয়না, আমাদের চারিপাশে নিরন্তর ঘটনাপ্রবাহ থেকে তুলে নেওয়া এক আঁচলা জলের মতো। তাই এই প্রবন্ধটিও "তোমার" জন্য। তোমারই জীবনের থেকে খসে যাওয়া মুহূর্তের আর বিস্মৃতির পাতাগুলো থেকে সযত্নে বুনে নেওয়া শামিয়ানার মতো। এই লেখাতে আমি "তোমাকে" পেতে চাই।
বহুকাল আগে কেউ একজন বলেছিল, "লেখাটা সবার জন্য হোক।" কিন্তু আদৌ কি সেটা হতে পারে? কলমের আঁচড়ে যখনই বুনেছি শব্দের জাল, কারও যেন মুখের ছায়া, কোনও অদেখা রূপ এসে পড়েছে ভাবনার ক্যানভাসে। তাই এই লেখার "অনেকটা" জুড়ে থাকুক "তুমি" আর বাকিটা থাকুক ব্যক্তিগত।
তবে কি অনেক সেই উড়োচিঠির মতো, যেমন লিখেছিলাম আগে? নাকি আর অনেক কথা যেগুলো লিখতে গিয়েও সময়ের অবগুণ্ঠনে বাঁধা পড়ে গেছিল?নাকি সেই অমোঘ প্রশ্নের মতো- "কেমন আছও তুমি?" যা বারবার তোমাকে ভাবতে বাধ্য করেছে তোমার অধরা স্বাধীনতাকে নিয়ে?এই চিঠি টা তাই আবারও তোমার জন্য। তবে এই চিঠিটার ভাবনা শুরু "একদিন যদি" দিয়ে।
কেমন হয় যদি একদিন আমি ঝড় নিয়ে আসি তোমার বাড়ি? বলতে পারও অভিমান, বলতে পারও রাগ, অথবা নেহাতই মন বদলাতে। অথবা আমি হয়ত ভীষণ নিষ্ঠুর, ভেঙ্গে দিতে চাই তোমার অপলক দর্প। বৈশাখী বিকেলের হাওয়ায় থাকবে গুনগুন-তোমার কানে, যখন তুমি শুনতে পাবে দলছুট হবার গান। তুমি তখনও পড়ার ঘরে, চশমা চোখে বইয়ের পাতায় ব্যস্ত। পেন্সিলের ডগা ছুঁয়ে যাচ্ছে তোমার নরম ঠোঁট, যখন পাতার হিসেবি শব্দেরা ব্যস্ত রেখেছে তোমার চোখ। কেমন হয় যদি আমি আসি "অন্যমনস্ক হবার ইচ্ছে" হয়ে, আর চুরি করে নিই তোমার সমস্ত ভাবনা। একলা ঘরে তখন খাঁচায় বন্দী পাখির মতো জানালার ক্রমাগত কষাঘাত, ঝোড়ো হাওয়ার টানে। আজ উজানের দিন, আজ তোমার ভেসে যাবার দিন। যতবার তুমি হেসেছও আনমনে কোনও বর্ণালী সন্ধ্যের কথা ভেবে, ততবার আমি পুড়িয়ে দিয়েছি জীবনের চাওয়া পাওয়ার হিসাবের খাতা, তোমার ঘরের কোণে; যাতে হারাবার ভয় কোনোদিনও না ওম হয়ে ছুঁতে পারে তোমার মনকে। কেমন হয় যদি বাধ্য করি তোমায়, আঙ্গুলের নরম টানে খুলে ফেলতে বেণী, লজ্জার চুপিচুপি এড়িয়ে সাহসী হয়ে উঠতে, আর এলিয়ে দিতে একদিকের কাঁধে, যখন তোমার কানের দুল বারেবারে ছুঁয়ে গেছে গাল; সেদিন আমি আবার আসব তোমার মন খারাপের চিলেকোঠায়, তোমার "অঝোর কান্না" হয়ে। হয়তও টুপ টাপ, হয়তও বা অঝোর বর্ষা নামাবও তোমার দুচোখে, ধুয়ে দেব যত সমস্ত দাগ যা দিনে দিনে তোমায় ভাবতে বাধ্য করেছে তোমার "না পাওয়া" গুলো নিয়ে। কেমন হয় একদিন বৃষ্টি হয়ে নেমে আসি তোমার ছাদে, যখন সারি সারি টবের বেড় ছাপিয়ে উপছে পড়েছে জল, যখন তোমার অজান্তে আমি মুছে দিয়েছি ঘরের ফেরার রাস্তা, যেদিন বালির শহরের মতো ভেঙ্গে পড়বে তোমার আকাশ, আর তার সমস্তটা জুড়ে শুধু তখন ঘন কালো মেঘ, পারবে তো দু'হাত বাড়িয়ে নিজের সর্বনাশের নেশায় মাততে? কেমন হয় যদি একদিন ডেকে আনি ছুটি, তোমার উঠোনে; সারি সারি কাশফুলের মাঝখানে স্কুল ফেরত ফ্রক পড়া মেয়ে; অথবা কোনও নামহীন সন্ধেতে অজানা উদ্দেশ্যে ধরা দুরন্ত স্টিয়ারিং; অথবা সেইদিন যেদিন আঙ্গুলের আংটি আর তোমাকে বেঁধে রাখতে পারেনি, খসে পড়েছে কাঁচের টুকরো হয়ে; যেদিন তোমার সখের আয়না তুমি ভেঙ্গে ফেলেছ মাটিতে আছড়ে, আর বলেছ, "আর কোনোদিনও ফিরব না"।
কেমন হয় যদি একদিন বুনে দিই রহস্যের জাল তোমার রাত্রিঘুমে। বন্দী করে ফেলি তোমায় তোমার ভালোলাগায়; তিলতিলে যে মুক্তির খোঁজে তুমি ছুটে বেরিয়েছ মন থেকে মনে, একদিন যদি তাকেই বেঁধে ফেলি স্মৃতির পিঞ্জরে, যদি কঠিন শাস্তি দিতে চাই তোমায় "তুমিতে" ফিরে যাবার, যদি বর্ণে বর্ণে বেঁধে ফেলি তোমার "ইচ্ছের ডাকবাক্স", পারবে আর ছেড়ে যেতে?
কেমন হয়, একদিন যদি...
ধন্যবাদান্তে,
সম্পাদক-নবপত্রিকা
সম্পাদক-নবপত্রিকা
This comment has been removed by a blog administrator.
ReplyDelete