Code

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

Second Header

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

Saturday, August 27, 2016

অজান্তে-প্রথম পর্ব



"আপনার পাশের সিটে কেউ বসেছে?" সিনেমা হলের অন্ধকারে তখন কিছু দেখা যাচ্ছে না, শুধু পর্দার আলোয় যেটুকু বোঝা যায় তাতে অনামিকা বুঝতে পারল খুব কাছেই দাঁড়িয়ে এক ব্যক্তি, তাকেই কিছু জিজ্ঞেস করছে। পর্দায় তখন ছায়াছবির প্রথম অংশ সবে শুরু হয়েছে, ঠিক এমন মুহূর্তে এমন বিড়ম্বনা সত্যিই অনামিকাকে একটু বিরক্ত করল। প্রথমে লক্ষ্য করেনি হলের আওয়াজে, পরে দ্বিতীয় বার সে যখন জিজ্ঞেস করল, তখন বুঝল সামনেই সেই ব্যক্তি দাঁড়িয়ে। একটু নিচু হয়ে তার দিকে চেয়ে তার পাশের সিটের খবর নিচ্ছে। "মনে হয় অন্য কোথাও বসতে পারেনি, তাই এভাবে..." কিন্তু একজন অজানা লোককে এভাবে পাশে বসতে দিতে ইচ্ছে করল না অনামিকার। ফাঁকাই থাক না সিট টা- কেউ না বসলে ভালই- কারণ আজ অনামিকা একলা একলা সিনেমা দেখতে এসেছে। তবে এটা তার প্রথম প্রচেষ্টা নয়, এর আগেও অনেকবার এসেছে একা একাই। অদ্ভুত ভাবে তার বন্ধুরা কিছুতেই যখন রাজি হয়না তার সময় ও সুযোগের সাথে, ঠিক তখনই এমন ঘটে। আগে একটু অলস লাগতো, কিন্তু এখন সয়ে গেছে। গোটা সপ্তাহ এভাবে খাটুনির পর শনিবার রাতে একটু ব্যক্তিগত সময় কাটাতে কার না ভাল লাগে।

"না এখানে আমার বন্ধু আছে। আপনি অন্য কোথাও বসুন।" এক রকম নাকচ করে দিল তার এই আবেদন, আর চুপ করে বসে রইল নিজের সিটে। যেন কোনোভাবেই কোনও অজানা পুরুষের সান্নিধ্য তার একেবারে "অপছন্দ"। সেই ব্যক্তি কোনও কথা না বলে সরে গেল তার পাশ থেকে, এবং অনামিকা নিজের মনে দেখতে থাকল সিনেমার অংশ। খানিক বাদে কি যেন মনে করে একবার পিছন ফিরে তাকাতে দেখতে পেল- সেই ব্যক্তি এখনও সিটের ধারে একটু দূরে দাঁড়িয়ে। মনে হয় হলের মধ্যে একটু দেরিতে এসেছিল, তাই কাউকে খুঁজে পায়নি সিট দেখার জন্য। আর আজকের মাল্টি প্লেক্সের যুগে টর্চ হাতে "বাম দিকের রো-তে তিনটে সিট পরে এইচ" বলা "সিনেমাওয়ালা"দের সংখ্যা প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। তাই অগত্যা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই সেখানে দেখছিল সেই ব্যক্তি।

"আপনি", প্রথমে একটু ফিসফিস করে বলল অনামিকা তার দিকে। প্রথমে একটু স্বার্থপরের মত ভেবেছিল অন্য কোথাও নিশ্চয় সিট পেয়ে যাবে, কিন্তু এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তার একটু যেন অনুশোচনা হল।

"এই যে আপনিই" আবার একটু জোর গলায় বলল অনামিকা। তাতে পিছনের সিটে বসে থাকা কাকু কাকিমা একটু অসন্তুষ্ট হলেও অনামিকা চাইল সেই ব্যক্তি যাতে শুনতে পায় তার গলা। আসলে হলের আওয়াজে তার কথা দমে যাচ্ছিল। বাধ্য হয়ে সিট থেকে একরকম জেদ করে উঠে বলল, "এই সমীর তোমায় এতক্ষণ ধরে ডাকছি, শুনতে পাচ্ছ না? চিপসের প্যাকেট টা এনেছ তো? এদিকে চলে এসো"
অনামিকা এতটা এগিয়ে যাবে সে নিজেও ভাবেনি, কিন্তু একটু দুষ্টুমি করতে ইচ্ছে হল, সকলের নজর এড়িয়ে। আলো ছায়ায় ঘন দাড়িতে ভরাট মুখটা একটু দেখা যাচ্ছিল। বয়স তিরিশ হবে হয়তও। চোখে একটা সোনালি ফ্রেমের চশমা যেটা কম আলোর মধ্যেও বেশ বোঝা যাচ্ছে।

সে প্রথমে বুঝতে পারেনি, কিন্তু পরে অনামিকার "এমন হাবভাব" দেখে বুঝল, এই রসিকতা তার জন্যেই। তাই চুপ করে একেবারে পাশে এসে বসে পড়ে অনামিকার দিকে তাকিয়ে বলল, "ওগো বললেও বুঝতে পারতাম"।

"নাহ, আসলে ভাবিনি আপনি ওখানে এভাবে...... কিন্তু বসতে দিয়েছি ব্যস। ওগো অবধি পৌঁছানোর দরকার নেই। " অনামিকা একটু দুষ্টুমি করে হাসতে হাসতে বলল।
"আমি সমীর।"

"সেকি সত্যিই আপনার নাম সমীর? আই মিন... রিয়েলি?" অনামিকা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল তার দিকে। "আপনি বাজে কথা বলছেন। থাক মুভি দেখুন, চিপসের প্যাকেট মনে হয়ে ভুলেই গেছেন"
"সমীর" (যদিও সে সমীর নয়) ও অনামিকা খুব ভালভাবেই বুঝতে পারছিল, এক অদ্ভুত রসিকতায় দুজনেই বেশ কেমন যেন উপভোগ করছে।

"সমীর আমার নাম নয়। তবে আজ থেকে হলে ক্ষতি কি?" একটু হেসে বলল অনামিকার দিকে। পাশের এক দম্পতি একটু "কেশে" বোঝাল এই কথোপকথন তাদের অন্তরঙ্গতায় একটু অন্তরায় হচ্ছে। সমীর তাই আবার একটু গলা নামিয়ে অনামিকার দিকে ঝুকে এসে বলল, "আমি কিংশুক, তবে আজ থেকে সমীর"

"আজ থেকে সমীর? বাবা, আপনি তো দেখছি, একটু তেই একেবারে অন্য ভাবনা ভেবে নিয়েছেন, যদি বলতাম রাঘব? তাহলে?"

"তাহলে তাই তাই, ক্ষতি কি?"

"ক্ষতি আছেই তো? আমি আপনাকে যেভাবে ডাকলাম, আর কেউ তো কোনোদিনও সমীর বলে ডাকবে না । তাহলে এই নামের লাভ কি?"

"আজই কি শেষ দেখা?"

(ক্রমশ......বাকি কথা আগামী পর্বে)

ধন্যবাদান্তে,
সম্পাদক-নবপত্রিকা

No comments:

Post a Comment