উৎসবের কোনও জাতি, কোনও ধর্ম বা কোনও সীমারেখা হয়না। উৎসব মানেনা কোনও কাঁটাতার। মানুষ যেখানে, উৎসবের ঢেউ সেখানে পৌঁছে যাবেই। তাই মাটির থেকে অনেক দূরে হওয়া সত্বেও "মা দুর্গার" স্নেহ থেকে কেউ বঞ্চিত হয়না। আগমনীর সুর তাই এসে পৌঁছেছে নিউ জার্সি শহরেও। হয়তও কোলকাতার মতো উপছে পড়া ভিড় নেই রাস্তায়, হয়তও নেই আলোর রোশনাই, হয়তও নেই সকাল থেকে পাড়ার মাইকে "বাজলো তোমার আলোর বেণু...", হয়তও নেই "গোষ্ঠ বিহারী মল্লিকের" মিষ্টির বাক্স- তবু আছে অনেক কিছু। আছে ছোট্ট পরিসরে বাঙ্গালিয়ানার গর্ব, আছে নিখাত আতিথেয়তা যা দেখলে বোঝা যাবে না যে এটা কোলকাতা নয়, আছে সিদুর খেলা ধুনুচি নাচ, আছে দিদি-দাদা দের খুনসুটি, আছে চুটিয়ে খাওয়া দাওয়া, আছে মাতৃ বন্দনায় গানের আসর, আর আছে চোখের কোণে এক ফোঁটা জল মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে "আবার এসো মা"।
এই সপ্তাহে আমি গেছিলাম ভারত সেবাশ্রম সংঘের পুজোয়।
সকাল থেকে অবিরাম বৃষ্টি, ঝড় আর সঙ্গে শীতের কাপুনি দেওয়া হাওয়া। তবু "মা" কে স্মরণ করে যাত্রা শুরু করেছিলাম। পৌঁছে দেখলাম একটা বিশাল হলঘরে তখন তিল ধারণের জায়গা নেই। ঠিক আমাদের কোলকাতার পুজোয় বেশ কয়েক পশলা বৃষ্টির পর যেমন থিক থিকে ভিড় জমে যায় প্যান্ডেলে, ঠিক তেমনই জমায়েত। তখনও অঞ্জলীর দেরী আছে। আগত সকল অতিথিদের মাঝে আমিও বাবু হয়ে বসে পড়লাম। একদিকে যখন মন্ত্র পাঠের তৎপরতা, তখন চোখে পড়ল আগত সকল মানুষের দিকে। কচিকাচারা যখন ঢাকের সুরে কখনও হেসে খেলে নেচে উঠছে, তখন হয়তও কোনও বয়স্ক কাকিমার চোখ জুড়ে আসছে আগমনীর আবেগে। সব বয়সের এবং ভাষার মানুষ এসেছেন এই উৎসবে যা নিঃসন্দেহে মৈত্রীর কথাই বলে।
সেখানেই দুপুরবেলা ছিল সকলের জন্য ভোগের আয়োজন। অঞ্জলীর পর সেখানে প্রসাদ নিয়ে যখন আবার এলাম মণ্ডপের সামনে, তখন দেখি ছোট ছোট গোল হয়ে সকলে বসে আছে। "আড্ডা"। হ্যাঁ, আড্ডা বসেছে যেখানে আছে- "কিরে তোরা কেমন আছিস? আচ্ছা রমেন দা এখন কি অন্য জায়গায় চলে গেছেন? এই বুল্টির খবর কি রে? শুনলাম তোর মা- বাবা আগামী মাসে এখানেই আসছেন? আচ্ছা ফুল কাকু, সন্টু মামার খবর কি? এই শোন, কলেজে শুধু তুই একা বদমায়েশ ছিলিস না, আমিও করতাম; কবে কোলকাতায় যাচ্ছিস? গেলে আমাদের বাড়ি যাবি কিন্তু, বাবা খুব করে বলেছে"। এ যেন এক পুনর্মিলন উৎসব, যেখানে কৌতূহল, হাসি ঠাট্টা, ছবি তোলা, আড্ডা, গুজব , গুলতানি এসবের কিছুই অন্ত ছিল না। আমিও বাদ যাই কি করে? আমার চেনা যে কজন ছিল, সবার সাথে বসে পড়লাম আড্ডায়।
সন্ধ্যের দিকে শুরু হল সন্ধি পুজো। এখানে প্রথম বার অস্ত্র দিয়ে মায়ের পুজো দেখলাম যেখানে "মা দুর্গা তথা চামুণ্ডা" কে অসি ও ত্রিশূল অর্পণ করা হল।
সেইখানে পুজো দেখে এবার গেলাম উৎসব সংঘের পুজোতে। এই পুজোর বয়স বেশ কম, তবে আয়োজনে তাক লেগে যাবার মতো। বেশ ঘটা করে ছোট্ট প্যান্ডেল বাঁধা হয়েছে। সেখানে যখন পৌঁছলাম তখন সিঁদুর খেলা, ধুনুচি নাচ চলছে। আসলে প্রবাসে পুজোয় নিয়মের অনেক পরিবর্তন হয়। নিয়মের বাধ্য বাধকতার কারণে এখানে রবিবার সন্ধ্যের মধ্যেই পুজো শেষ করতে হয়। তাই প্রথা অনুযায়ী, সেই দশমীর বিজয়া মিলনও এখানে একদিনেই পালিত হয়।
সত্যি বলতে এমন আন্তরিকতায় আমি মুগ্ধ। আমি আশা করি, আমার সকল পাঠক বন্ধুরা পুজোয় ভীষণ আনন্দ করছে। আর সেই জন্যই আমার আনন্দও সবার সাথে ভাগ করে নিলাম।
আপনাদের এরকম কোনও ভ্রমন অভিজ্ঞতা থাকলে অবশ্যই লিখে পাঠান আমাদের ডাকবাক্সে (info.amarbanglavasa@gmail.com) ছবি সহ।
ধন্যবাদান্তে,
সম্পাদক-নবপত্রিকা
সম্পাদক-নবপত্রিকা
No comments:
Post a Comment