Code

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

Second Header

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

Sunday, October 16, 2016

যাযাবর- তৃতীয় পর্ব (বুস্কিল ফলস)

বুস্কিল ফলস- পেন্সেল্ভেনিয়া

এইবার গেলাম কাছে পিঠের বেশ একটা সুন্দর জায়গায়। নিউ জার্সি থেকে প্রায় এক ঘণ্টার রাস্তা পেন্সেল্ভেনিয়ার দিকে। পেন্সেল্ভেনিয়া খুব সুন্দর একটি State যা তার দিগন্ত বিস্তৃত চাষ জমি, উইন্ডমিল, সুদৃশ্য পাহাড়ি রাস্তার জন্য বিখ্যাত। সেইখানেই রয়েছে বুস্কিল ঝর্ণা। এই State এ ঝর্ণার সংখ্যাও নেহাৎ কম নয়, তবে সবকয়টির মধ্যে এই ঝর্ণার বিশেষ আকর্ষণ হল এখানকার Trail।



দুপুরের রোদ মেখে যখন গিয়ে পৌঁছলাম, তখন বাজে বেলা ২টো। সাধারণত এইটাই সবচেয়ে আদর্শ সময় এই ধরনের কোনও ভ্রমণের জন্য। এই রাজ্যে সমস্ত দর্শনীয় স্থান সন্ধ্যে ৬ টার মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। তাই হাতে একটু সময় নিয়ে যাওয়াই ভাল। টিকিট কাটার স্থানে রয়েছে এই ঝর্ণার নানান রকম Trail বেছে নেবার সুযোগ। সহজ কথায় Trail হল এক ধরনের যাত্রাপথ যার বিভিন্ন বিশেষত্ব আছে। এই Trail আপনি যেখান থেকে শুরু করবেন, ঠিক সেইখানেই একটি বিশেষ সময়ের ফিরিয়ে নিয়ে আসবে- প্রায় round trip বলা যেতে পারে; তাই হারাবার ভয় নেই আপনার। এই ধরনের যাত্রাপথে বিশেষ ধরনের রঙিন চিহ্ন , দিক নির্দেশ , সময় পরিধি , ম্যাপ থাকে। আপনি যে ধরনের Trail বেছে নেবেন , শুধু সেই Trail এর রঙ ও দিক নির্দেশই অনুসরণ করতে হবে, নাহলে রাস্তা ভুল হতে পারে।



আমি বেছে নিয়েছিলাম একটি Trail যা অনুসরণ করলে, বন-জঙ্গল-ঝর্ণা সব পেরিয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টার মধ্যে শুরুর জায়গায় ফিরে আসতে পারা যাবে। এই Trail অসংখ্য সিঁড়ি দিয়ে বোনা, যা আপনাকে পাহাড়ের খাড়া ঢাল এর গা বেয়ে নানান দিক দিয়ে ঝর্ণার একদম কাছে নিয়ে চলে যাবে। কাঠের তৈরি এই সিঁড়ি খুব খাড়া ধাপের সাথে নীচে নেমে গেছে যেখানে ঝর্ণার জল কলকল শব্দে আছড়ে পড়ছে। কাঠের বারান্দার একদম ধারে এসে যদি একবার নীচে তাকিয়ে দেখা যায়, তাহলে মাথা ঘুরেও যেতে পারে। ভীষণ চরাই উতরাই ও পাথুরে ঢালান করতে পারে আশ্চর্য, যার বুক চিড়ে বয়ে চলেছে খরস্রোতা ধারা।


চোখে পড়ল পর্যটকদের উৎসাহ সিঁড়ির বিভিন্ন প্রান্তে। কেউ ব্যস্ত ক্যামেরায় এই বিশেষ মুহূর্তকে ধরে রাখার জন্য, কেউ বা শুধুই নির্বাক অপরিসীম আনন্দে, কেউ বা প্রিয়জনকে তার মনের কথা বলতে উৎসুক।



 এই সিঁড়ি সর্পিল আকৃতিতে কখনও নিয়ে যাবে পাদদেশে, কখনও বা পাড় করাবে স্নিগ্ধ স্রোতধারা, কখনও বা নিয়ে যাবে আবার ঝর্ণার গা বেয়ে একদম উপরে যেখানে জলের ধারা কয়েক ইঞ্চির দূরত্বেই নেমে যাচ্ছে অতল গভীরে। জায়গায় জায়গায় আছে দিক নির্দেশ, তথ্য সম্বলিত বোর্ড যা আপনাকে সব সময় ঠিক পথে নিয়ে যাবে। উপরের শান্ত স্তিমিত জলের স্রোত দেখলে বোঝার উপায় নেই যে, এই ধারা এমন বিধ্বংসী হয়ে নেমে যাচ্ছে পাহাড়ের গভীরে। কিছু কিছু জায়গায় হাত বাড়ালেই পাওয়া যাবে সেই ধারা ছুঁয়ে নেবার সুযোগ।



ঝর্ণার জল যেখানে নেমে এসে শান্ত হয়ে গেছে, সেখানে রোদ্দুর এসে পড়েছিল পাহাড়ের ফাঁক দিয়ে। আর সেই রোদ্দুরে চকচক করছিল স্রোতের নীচে লুকিয়ে থাকা পাথুরে ঢাল, যেখানে পড়ে রয়েছে অসংখ্য penny। স্থানীয় মানুষ নিজের মনস্কামনা জানিয়ে penny ছুঁড়ে দেয় জলের মধ্যে। হয়ত এই স্রোত জানে অসংখ্য মানুষের মনের কথা।



নানান বাঁক ও জঙ্গলের গা ঘেঁষে যখন এসে পৌঁছলাম শুরুর জায়গায় তখন সন্ধ্যে নামছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে এতটাই ডুবে ছিলাম যে মনেই হয়নি, কখন পেরিয়ে গেছে এতটা সময়।সিঁড়ি দিয়ে ওঠা নামার কষ্ট কখন যেন এক অদ্ভুত প্রশান্তিতে পরিণত হয়েছিল।

আপনাদের এরকম কোনও ভ্রমন অভিজ্ঞতা থাকলে অবশ্যই লিখে পাঠান আমাদের ডাকবাক্সে (info.amarbanglavasa@gmail.com) ছবি সহ।

ধন্যবাদান্তে,
সম্পাদক-নবপত্রিকা

No comments:

Post a Comment