Code

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

Second Header

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

Wednesday, December 9, 2015

কেমন আছো তুমি - দলছুট পর্ব

আজকের লেখাটা একটু অন্য রকম। এটাকে প্রবন্ধ বলা যেতে পারে, আবার নেহাতই আমাদেরই মধ্যে থেকে নেওয়া কোনও চরিত্রের অনুভুতি/ভাবনা বা গল্পও হতে পারে। একটা নিতান্তই কথোপকথন থেকে কিছু প্রশ্ন মনে এলো; "দলছুট" বলতে আমি, তুমি, আমরা সবাই ঠিক কেমন বুঝি? কেমন ভাবে সেটা হওয়া যায়... কেমনই বা সেই অনুভূতি?

আবিরের কথা মনে আছে? সেই যে অফিস যেতে গিয়ে হারিয়ে গেল বৃষ্টির মাঝে, দুহাত প্রশস্ত করে সাড়া গায়ে মেখে নিল মুক্তির আস্বাদ। অথবা অনামিকার কথা? আসন্ন বিয়ের সামাজিক টানাপোড়েন থেকে নিজের জীবনকে খুঁজতে বেড়িয়ে, একদিন দেখা হয়ে গেল আরেক অচেনা মানুষের সাথে, যার চাওয়া-পাওয়া গুলো অনেকটা তারই মতো। অথবা সেই পাপনের কথা? সেই যে ছোট্ট ছেলেটা! যার চিলেকোঠায় "মন খারাপের ঘর"টা বড় হতে হতে একদিন সারা বাড়িটাকে ছেয়ে
ফেলল। তার অবুঝ মনে অনেক প্রশ্ন সারাটা দিন। একদিন সকালে নিয়ম মতো বেরোলও, কিন্তু আর কোনোদিন স্কুল থেকে ফিরল না- তার মন খারাপের দুনিয়ায়।

ভয় হয় তাই না? এরকম হতে গেলে হয়তো যেন অনেক সাহসের দরকার? এরা তো সকলেই ব্যতিক্রমী, যাকে অন্যভাবে বলতে গেলে বলা যায় "দলছুট"। তবে কি এরা শুধুই ব্যতিক্রমী, নাকি আমরা আমাদের সাহসটা ওদের মতো জোগাড় করে নিতে নিতান্তই অপারগ? হয়তো কেউ ভাবছে "এসব কাগজের কাল্পনিক চরিত্র। বইয়ের পাতায়, খোশমেজাজই সান্ধ্য আড্ডায়, অথবা সপ্তাহান্তে 'প্রিয়জনের' হাতে হাত রেখে দেখা সিনেমায় শোভা পায়, বাস্তবে নয়।" তাহলে দুটো জিনিস ঘটতে পারে, হয় আমরা বাস্তব জীবনের থেকে অনেকটা দূরে যান্ত্রিক গড্ডালিকা প্রবাহে এতটাই অভ্যস্ত হয়ে গেছি, যে স্রোতের বিমুখে সাঁতরে ওঠার ইচ্ছেটাই চলে গেছে, আর নাহলে আমরা কোনোদিন সেই বাস্তব জীবনের কাছেই পৌছাতে পারিনি। নিজেদের সাথে চিরকাল "Compromise" (বাংলা অভিধানে এর সাথে প্রাসঙ্গিক কোনও শব্দই ছিল না) করে গেছি। তোমার বাড়ির ছাদে সদ্য বোনা চড়াইয়ের বাসাটা দেখেছো? আরে, নামহীন এই পাখিগুলোও তো একদিন নীড় ছেড়ে উড়ে যাবার সাহস দেখায়, তাহলে আমরা কেন পারিনা? কখনও আয়নার সামনে এই প্রশ্নটা করবে।

"বাকেট লিস্ট" -এর কথা মনে আছে? শেষ বয়সে এসে "না করা সবকিছুর জন্য একটা আক্ষেপের ঝুলি"। মনে আছে "আহেলির" কথা? সেই মেয়েটা, যে এভাবেই প্রতিদিন "অন্য কারও" হতে গিয়ে "নিজের সত্ত্বাকেই" তিলে তিলে মেরে ফেলেছিল; সাওয়ারে হাঁটু মুড়ে অনেক ক্ষণ বসে কেঁদেছিল, "নিজের না পাওয়া" গুলো নিয়ে। কেন হয় এমন, কখনও নিজেকে প্রশ্ন করেছ?

আচ্ছা দলছুট মানে কি, সাধারণ জীবনের চাহিদাগুলোর চেয়ে আরেকটু বেশি কিছু চেয়ে নেওয়া? নাকি "আমি কি পেলাম, কি পেলাম না" এই হিসেব নিয়ে অঙ্কের মায়াজালে আরও নিজেকে আবদ্ধ করা? আমি জানি, এই প্রশ্নটা নিশ্চয় তোমারও মনের মধ্যে ঘোরা-ফেরা করছে।

ভিড় তো চিরকালই ছিল। কিন্তু তাতে মিশে গেলে, নিজেকে আবার খুঁজে পাবে তো, আবার অন্য কোনও দিন? "আমি পারি না, আমার হবে না" এই বলে হাজার মুখের ভিড়ে নিজেকে লুকিয়ে ফেললে, আয়নার সামনে নিজের মুখ দেখতে পাবে? তখন তো দেখবে ছবিটা একেবারে অন্য! হয়তো নিজেকেই প্রশ্ন করবে, "এই ছবিতে আমি কই?" পারবে তো, তার উত্তর খুঁজতে? একবার সেই ভিড় কাটিয়ে বেড়িয়ে দেখো। একবার নিজেকে প্রশ্ন করে দেখ "কেমন আছো তুমি"। আর একদিন বেড়িয়ে পড়ো নিজের সাথে। দেখবে অধরা গল্পগুলো তোমার আঙ্গুল ছুঁয়ে যাচ্ছে। কেমন সেই গল্পেরা? কেমন হয় সেই দলছুট মুহূর্ত গুলো? কেমন করে পাওয়া যাবে তার অনুভূতি?

এই ঘটনাটা প্রায় ছয় মাস আগের। অফিস থেকে ফিরছিলাম সেদিন। বেশ ঝির ঝিরে বৃষ্টি, উস্তাদ রশিদ খানের একটি জনপ্রিয় গান গুনগুন করতে করতে রাস্তা পার হলাম টেকনোপলিস মোড়ে। সল্টলেক তখন বেশ শুনশান, সারাদিন বৃষ্টি, তার ওপর বলতে গেলে সপ্তাহের শেষ কাজের দিন। এক ব্যাগ কাগজ নিয়ে প্রায় কাক ভেজা, তবু স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে বাসের কোনও দেখা নেই। বেশি রাতে, এই জায়গায় মাঝে মাঝেই বাস বন্ধ হয়ে যায়। একজনকে দেখলাম অনেক ক্ষণ ধরে বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে ভিজছে, বেশ খানিকটা দূরে। সত্যি বলতে এমন পরিস্থিতিতে যেচে কোনও মেয়ের সাথে আলাপ/সাহায্য করতে যাওয়ার অর্থ হল, নিজেকে অহেতুক সন্দেহের পাত্রে পরিণত করা। সে জানে আমি ছাতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি, কিন্তু সেই হয়তো সাহস করেনি কোনও অচেনা মানুষের থেকে সাহায্য নিতে।

বলতে গেলে, কিছু সময়ের জন্য সেই ভাবনা চিন্তাগুলো প্রায় বিসর্জন দিয়ে ভদ্রতার খাতিরে একবার জিজ্ঞেস করলাম "আপনি কোনও বাসের অপেক্ষা করছেন? আমি দাঁড়িয়ে আছি, কিন্তু প্রায় আধ ঘণ্টা কিছুর দেখা নেই। আপনি পারলে ওই ছাউনিতে এসে দাঁড়াতে পারেন, আমার সাথে।" ছাতাটা বাড়িয়ে দিলাম তার জন্যে। কিছু কথা বলেনি প্রথমে, নিতান্তই দ্বিধা এবং ইতস্তত করে এসে দাঁড়ালো ছাউনিতে। কেউ কেউ মজা করে বলতে পারে, "এ তো একেবারে সিনেম্যাটিক মোমেন্ট!"। কিন্তু সত্যি বলতে দুজনেই বিরক্ত আমাদের নিজেদের পরিস্থিতির কথা ভেবে। কিছু ক্ষণ বাদে নীরবতা ভেঙে জিজ্ঞেস করলাম "আপনি কোনদিকে যাবেন?" এবারও শুধুই সাহায্যের জন্য (যদিও এই সাহায্য করার অতি উৎসাহকে কেউ কেউ কটাক্ষ করতে পারেন। কিন্তু সেই পরিস্থিতিতে আমার এটাই শ্রেয় মনে হয়েছিল)। তার নির্বাক মুখ দেখে ভাষা পরিবর্তন করে জিজ্ঞেস করলাম "Excuse me, I guess, you are looking for some commute. Can I ask, where you wanna go? I am also waiting for the same bus...". এইবার তার সপ্রতিভ উত্তরে বুঝলাম সে আমার মতো উত্তর কোলকাতার বাসিন্দা, এবং প্রায় আমার বাড়ির কাছেই থাকে; অবাঙালি। তাই আমাদের পরবর্তী কথাগুলো ভিনদেশী ভাষাতেই এগোতে থাকলো- আমাদের কাজ কর্ম, অফিসের চাপ, আজকের এই হালের কারণ, কোন কোন প্ল্যান বানচাল হল এই বৃষ্টির জন্য, আদৌ বাসের দেখা মিলবে কিনা, কতদিন কোলকাতায় আছো, কলেজের আড্ডা আরও কত কি।

এর মাঝে ছুটে গিয়ে একটা বাস থামালাম কোনও মতে, আর চড়ে পড়লাম দুজনে। বাসের সিট জোগাড় হয়ে গেল, আর আমাদের তারস্বরে আড্ডা শুনে আমাদের পিছনের সিটে বসে থাকা প্রেমী যুগল, স্বামী স্ত্রী, অফিস ফেরত দাদা দিদিদের কম আক্ষেপ হয়নি। সিনেমা, হবি, উইকেন্ড, খিল্লি কিছুই বাদ ছিল না তাতে। তার কথায় বুঝতে পারছিলাম, একটা মানুষ কিভাবে ধীরে ধীরে বন্ধু হয়ে যাচ্ছিল- নাম না জানা বন্ধু। একটু কথা বলার সাহস, একটু নিজের মনের কথা অকপটে বলার সাহস,
একটু বিশ্বাস করার সাহস আমাদের দুজনকেই সাবলীল করে তুলছিল। কখনও কখনও আমাদের কথায় আমাদের আশে পাশে মিশে থাকা চরিত্রের কথাও উঠে এসেছে। আমরা দুজনেই বুঝেছি, সেই চরিত্রগুলোর অনেকটাই অনেকাংশে মেকী, অথবা দলছুট হবার ক্ষমতা রাখে না। আচ্ছা আমরা তো কতটাই না সাবধানী, আমাদের প্রিয়জনের প্রতি, আমাদের চেনা মানুষগুলোর প্রতি। প্রতিটা কথায়, আচরণে সামলে চলি এই ভেবে যাতে "বন্ধু- বিচ্ছেদ" না হয়। কিন্তু সেদিন তো আমরা কেউ কাউকে চিনতামই না। তাহলে নিজেদের সম্পর্কে এতো গুলো কথা বললাম কেন? মনের মধ্যে জমে থাকা অনেক অজানা কথা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বলার চেয়ে, কোনও অজানা বন্ধুর সাথে ভাগ করে নেওয়াটা দলছুট হবারই তো প্রশ্রয়- তাই নয় কি?

এমনকি কিছু বাসের লোক রীতিমতো অতিষ্ঠ হচ্ছিল এই ভেবে, নিশ্চয় মেলায় হারিয়ে যাওয়া দুই বন্ধুর এতদিন বাদে দেখা হয়েছে। আমি বা সেই মেয়েটি একবারও ভাবিইনি যে আমরা অপরিচিত; কিন্তু একে অপরের সাথে অনর্গল আড্ডা মেরেছি। বাস থেকে দুজনে নেমে যাবার পর মনে পড়েছিল, "হায়! নামটাই জিজ্ঞেস করিনি একে অপরকে। " আমিই জিজ্ঞেস করলাম তার নাম; সে শুধু হেসে বলেছিল, যেদিন আবার দেখা হবে সেদিন বলবে। কোনও মোবাইল নাম্বার, অথবা নাম কোনও কিছুই আমরা একে অপরকে বলিনি, শুধু এই ভেবে "এই রকম দলছুট মানুষ যদি আরও থাকে, তাদের মধ্যেই আবার একে অপরকে খুঁজে পাব"। আর দেখাও হয়নি। হতেই পারত কোনও রোমান্স, অথবা প্রেম প্রেম বন্ধু ভাব- কিন্তু হতে দিইনি আমরা কেউই।

আমাদের দুজনের কথা তো "নিতান্ত ফর্মাল" হতেই পারত। কিন্তু দুজনেই সেটার তোয়াক্কা করিনি। তাই গল্পের নদী চিরন্তন খাতে গিয়েও অন্য ঘটনার পথে বেঁকে গেছিল।আচ্ছা তোমারও আশে পাশে এমন অনেক ঘটনাই ঘটতে পারত, যদি তুমি একটু সাহস করতে। সহস্র গল্পেরা ভিড় করে থাকত তোমার দরজার পাশে, সকালের প্রথম আলোয় তোমাকে উপহার দেবার জন্যে। প্রত্যেক দিন হত নতুন উপন্যাসের মতো, নতুন মুখ, নতুন সাহস, নতুন দলছুট হয়ে যাবার গল্প। কেউ কেউ
বলে, "আজ আর সেই রকম দিন আর নেই, আজ নেই সেই কলেজ ষ্ট্রীটের নস্টালজিয়া, কিম্বা বিকেলের ছাদে এলো চুলে মেয়েবেলার মুক্ত আকাশ।" কথাটা কি সত্যি?

আমি তো খুঁজে পাই সব কিছুই। বই পাড়ার চায়ের দোকানে বসে অজানা লোকের সাথে আড্ডা, স্কুল বইয়ের দোকানে পুরনো বিষয়গুলোর নতুন সংস্করণে নিজের স্কুলজীবনকে খুঁজে পাওয়া, নতুন বইয়ের কয়েকটা পাতা উল্টে নেবার পর সেই প্রিন্টের গন্ধ, বৃষ্টির দিনে একলা বাস স্টপের অতিথি, কিম্বা বাসের প্রত্যেক মুখে লুকিয়ে থাকা নতুন গল্পের স্বাদ। কখনও সময় পেলে যেও নদীর ঘাটে, বাগবাজার কিম্বা প্রিন্সেপ। অথবা নেহাত আহিরিটলা থেকে বাগবাজার পায়ে হেঁটে পথ, পুরনো বাড়ি,
ট্রামলাইন, সূর্যাস্তের সময় জেটিঘাটে মত্ত ছেলেদের সাঁতার। কখনও সময় পেলে, যেও একবার একলা জানালার পাশে, গ্রিলের ফাঁকে ফাঁকে আঙ্গুল রেখে ধরতে চেও ছোট্ট খুকুর বড় হয়ে ওঠার গল্প। ঝুল পড়ে যাওয়া পুরনো গিটার বার করে রাখো, ওটাই তোমার টাইম মেশিন, তোমার নস্টালজিক অতীতের। একদিন অফিসে ফেরত নেমে পড়ো বাস থেকে, ধরে নাও অন্য কোনও পথ, দেখবে তোমার চিন্তা-ভাবনার ঘেরাটোপের বাইরেও একটা জগত আছে। একদিন রাগ করো নিজের ওপর, ভেঙে
ফেলো সব ঘুণ ধরে যাওয়া নিয়ম, ডায়েরির পাতায় লিখে ফেলো তোমার গল্প- হ্যাঁ তোমার নিজের গল্প। যে রঙের খোঁজে তুমি ঘুরে ফিরেছ, দেখবে তোমার কলমের মাঝে কত রং।

একদিন মেখে দেখ "দলছুট" হয়ে যাওয়ার কত রং!

(ক্রমশ প্রকাশ্য, পড়তে থাকুন। পরবর্তী অংশ পরের প্রকাশনায়।)



আচ্ছা তোমার কাছে দলছুট হবার মানেটা কিরকম? অথবা কোন কোন ঘটনা বা মুহূর্ত তোমাকে নস্টালজিক করে তোলে? লিখে ফেলো একটা পাতায় যেকোনো ভাষায় সাবলীল ভাবে। অথবা মনের মধ্যে কোনও প্রশ্ন জমে উঠেছে যা জিজ্ঞেস করতে চাও আমাকে। কোনও স্বীকারোক্তি, অথবা কোনও ব্যক্তিগত সমস্যা নিয়ে জানতে চাও স্বাধীন মতামত। নাম ও বিবরণ সহ যোগাযোগ করো আমাদের E-দপ্তরে info.amarbanglavasa@gmail.com । [নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হলে স্পষ্ট ভাবে তা উল্লেখ করো চিঠিতে] বাছাই করা প্রশ্ন ও উত্তরগুলি প্রকাশিত হবে আমাদের পত্রিকায়।

ধন্যবাদান্তে,
সম্পাদক-নবপত্রিকা

No comments:

Post a Comment