Code

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

Second Header

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

Friday, January 13, 2017

যাযাবর- ষষ্ঠ পর্ব (নিউ হ্যাম্পশায়ার- দ্বিতীয় সংখ্যা)


আমাদের যাত্রা শুরু করেছিলাম কানেক্টিকাট থেকে। এই রাজ্যের অন্যতম আকর্ষণ হল হার্টফোরড শহর। বেশ পুরনো দিনের শহর এটি, এবং বেশ কিছু নামী আন্তর্জাতিক সংস্থার মুখ্য দপ্তর এই শহরে অবস্থিত। নদীর পাশে জেগে ওঠা এই শহরের রাত্রি বেলার রোশনাই দেখার মতো। এই শহরের রাস্তা ঘাট তুলনামূলক ভাবে অন্যরকম। মূল শহরের মধ্যে বসতি তেমন ভাবে নেই, শুধুই হোটেল ও কার্যালয়। শহুরে পথ দিয়ে যাবার সময় চোখে পড়ল, সুউচ্চ কাঁচের আরশি দেওয়া অট্টালিকার সারি, যার বুকে ঠিকরে পড়ছে মেঘলা দিনের হাল্কা রোদ্দুর।





কোলকাতার এসপ্ল্যানেড মোড়ের কথা আমার খুব মনে পড়ে। রঙিন সব কাপড়ের দোকানের সারি, ট্রামলাইন, দোকানীর দরদাম, ফুচকা চাট, ফাস্ট ফুডের সম্মোহনী সুবাস, মোড় ঘুরতেই হঠাৎ কোনও বাড়ির সিঁড়ি যা উঠে গেছে কোনও অফিস ঘরের ভেতর, ব্যাগ হাতে মুচকি হেসে প্রিয় মানুষটিকে বলা, "আচ্ছা ঐ দোকানে তো যাওয়াই হল না। চলও, তাহলে ঐ দিকেই যাই... তুমি মানা করবে না কিন্তু"। এই শহরের মোড়গুলোও অনেকটা এমনই। উত্তর কোলকাতার অধিবাসী হওয়ায়, নস্টালজিক হয়ে পড়াটা আমার স্বভাবগত দোষ, কিন্তু বিদেশের মাটিতেও যখনই চোখের সামনে ধরা পড়েছে কোনও জনপদ, কেন জানিনা বারবার আমার মন অজান্তেই টুকরো টুকরো স্মৃতির মধ্যে আমার শহরের সাদৃশ্য খুঁজে বেড়িয়েছে। আসলে, কোনও জিনিসের প্রতি টান থাকলে, আমাদের মন হয়ত এভাবেই নতুন কিছুর মধ্যে "পুরাতনী" কে মিলিয়ে দিতে চায়।



আর এই শহর যখন গাড়ির লুকিং গ্লাসে ধীরে ধীরে দূরত্বের সাথে মিলিয়ে গেল, তখন সিনেমার রিলের মতো একের পর এক দৃশ্য এসে উপস্থিত হল চোখের সামনে। যে হাইওয়ে দিয়ে যাচ্ছিলাম তা কখনও হেলে আসা পাহাড়ের প্রাচীর সমান দেওয়ালের গা ঘেঁষে ছুটছিল, কখনও বাঁক ঘুরতেই স্পর্শ করে যাচ্ছিল কোনও গভীর উপত্যকা যার অধিকাংশ অংশই কুয়াশায় ঘেরা, কখনও সেই রাস্তা নিয়ে যাচ্ছিল কোনও ক্ষুদ্র জনপদে, কখনও বা হৈ হৈ করে এগিয়ে চলেছিল কোনও হ্রদের ধার দিয়ে। আগেই বলেছি, এই বারের বেরিয়ে পড়ার মূল উদ্দেশ্যই হল- যাযাবরের মত উদ্দেশ্য আর গন্তব্যের আকর্ষণ ছাড়িয়ে শুধু প্রকৃতিকে নিরীক্ষণ করা। আমার খুব মনে আছে সেই দিনগুলোর কথা, যখন আমি শহরের দিনগুলোকে বিদায় জানিয়ে চলে যেতাম আমার গ্রামের বাড়িতে। হাওড়া জেলার খুব প্রত্যন্ত এক গ্রাম। হয়তও নাম বললে, খুব কম মানুষই বলতে পারবে তার সাকিন ঠিকানা। বহুবার গেছি, বহু দিন কাটিয়েছি সেইখানে, কিন্তু যতবার গেছি ততবার নতুন কিছু দেখেছি। কারণটা কেউ অনুমান করলে আমি কিন্তু খুব খুশি হব। আচ্ছা বলেই দি, তাহলে। আসলে কারণ হল "সবুজ"। আমাদের গ্রাম বাংলার প্রকৃতি সবুজের অলংকারে সবসময়ই নতুন সাজে সেজে ওঠে। পুকুরের ধার দিয়ে উঠে আসা পাতিহাঁসের দল, বাঁধানো ঘাটের কাছে দাঁড়িয়ে জল মাকড়সা দেখতে থাকা ডানপিটে মেয়ে, পিঠে ঘুড়ি বেঁধে খালি পায়ে সবুজ ক্ষেতের আলের মধ্যে দিয়ে দৌড়ে যাওয়া ছেলের দল, কিম্বা সূর্যাস্তের সময় মানুষ-সমান লম্বা ঘাস বনের মধ্যে দিয়ে ভেসে আসা মিঠে হাওয়া, বৃষ্টির দিনে ঘরফেরা গরুর খুড়ের দাগে বসে যাওয়া মাটির রাস্তা, কিম্বা আমবাগানের ছায়ায় বসে ঝগড়ায় মত্ত শালিকের দল। প্রতিবার নতুন কিছু দেখেছি, পল্লী প্রকৃতির বুকে এবং তার সাথে মিশে থাকা জনজীবনে। ঠিক একই কারণে, আমি যতবারই পাহাড়, নদী, জঙ্গল ঘুরে থাকি না কেন, প্রতিবারই যেন নতুন লাগে। সবুজ যতই "সবুজ" হোক না কেন, প্রতিবার যেন সে আলাদা।





নিউ হ্যাম্পশায়ার রাজ্যের ভিতরে আরও উত্তরের দিকে তখন এগিয়ে চলেছি। আর তার একটা উদ্দেশ্য হল, মাউন্ট ওয়াশিংটন পৌঁছানো। এই রাজ্যের অন্যতম দর্শনীয় স্থান হল এই পাহাড়। সত্যি বলতে, আমাদের দার্জিলিঙের উঁচু পাহাড়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সাথে এর কোনও তুলনাই চলে না। কিন্তু এই পাহাড়ের অন্যতম আকর্ষণ হল ১২৫ বছরের ঐতিহ্য পূর্ণ Cog Railway (www.thecog.com)। দার্জিলিঙের টয় ট্রেনের সঙ্গে সাদৃশ্য থাকলেও এই রেলগাড়ির যাত্রা এক্কেবারে অভিনব ও রোমাঞ্চকর। আমার দার্জিলিং যাবার সৌভাগ্য কোনোদিনও হয়নি; কিন্তু ছবিতে, গল্পে, ভ্রমণ কাহিনীতে, সিনেমার পর্দায় বহুবার শহরকে দেখেছি। দেখেছি "কু-ঝিক ঝিক" রেলগাড়ির যাওয়া আসা। হয়তও একদিন নিশ্চয় পৌঁছাতে পারবো ঘুম স্টেশনের কাছে, যেখানে কবে যেন মনের অজান্তে রেখে এসেছিলাম "চল ঘুরতে যাই"-এর ইচ্ছে। কথায় আছে "সাধ"। এই সাধ এমনই জিনিস যা এমনকি শেষ নিঃশ্বাসের আগের মুহূর্ত পর্যন্ত তাড়া করে। আমারও অনেকটা এমনই কিছু সাধ আছে, যা অন্তত মেটাতেই হবে। আর সেই সাধেরই কিছুটা পূরণ হল মাউন্ট ওয়াশিংটনে এসে। আসলে নিয়ম মাফিক কোনও গন্তব্য না বেছেই ছলে এসেছিলাম এই পাহাড়ের পাদদেশে। কিন্তু সেখানে এসে জানতে পারলাম এই পাহাড়িয়া রেলগাড়ির গল্প, যা নাকি স্থানীয় মানুষের কাছে ভীষণ আদরের জিনিস।



রেলগাড়ি চড়ে সেই পাহাড়ের চুড়ায় পৌঁছানোর গল্প, তুলে রাখলাম আগামী পর্বের জন্য....

আপনাদের এরকম কোনও ভ্রমন অভিজ্ঞতা থাকলে অবশ্যই লিখে পাঠান আমাদের ডাকবাক্সে (info.amarbanglavasa@gmail.com) ছবি সহ।

ধন্যবাদান্তে,
সম্পাদক-নবপত্রিকা

Sunday, January 1, 2017

যাযাবর- ষষ্ঠ পর্ব (নিউ হ্যাম্পশায়ার- প্রথম সংখ্যা)

প্রত্যেক মানুষেরই আপন ছোটবেলার প্রতি একটা অদ্ভুত টান থাকে। বেশ কিছু ঘটনা, অভ্যাস এমনকি অনেক ছোট ছোট ভালোলাগাও মনে পড়ে যায় আমাদের ব্যস্ত জীবনযাপনের মধ্যে। সকাল বেলা চায়ের কাপে হাল্কা চুমুকে খবরের কাগজের পাতা উল্টানোর সময় স্বপ্নিলের হয়তও মনে পড়ে গেল- কিভাবে ছোটবেলায় বাবা অফিস বেরিয়ে যাবার পরই খবরের কাগজের রঙিন পাতাগুলো থেকে লাল নীল বিজ্ঞাপন বেছে নিত সে আর কাঁচি দিয়ে কেটে লুকিয়ে রাখত ড্রয়িং খাতার মধ্যে; রান্নাঘরের ঘুলঘুলি থেকে নেমে আসা রোদ্দুর যখন ছুঁয়ে যাচ্ছে অরুণিমার গাল, তখন তার মনে পড়ে পড়ার ঘরের কোণে জমিয়ে রাখা শুকতারা আর আনন্দমেলার বান্ডিল; ঋতব্রত অফিসে ব্যস্ত মিটিং সেরে বেরিয়ে আসার সময় মনে করে স্কুলের মৌখিক পরীক্ষার দিনগুলো, যখন হাজারও প্রশ্নে বিদ্ধ হতে হত তাকে; পাপিয়া দুপুরে ছেলের সোয়েটার বুনে নেবার সময় গুনগুন করে ওঠে সেই গান, যা কখনও তার মা গেয়ে উঠত অলস দুপুরবেলা কোলের ওপর আদর খেতে খেতে অজান্তেই ঘুমিয়ে পড়া মেয়ের জন্য; কিংশুকের মনে পড়ে বইয়ের মলাটে লাগাবার জন্য স্টিকারের বায়নার কথা , যখন সে মোটা মোটা হিসাবের বই বয়ে নিয়ে যায় বড় বাবুর ঘরে; আবৃত্তির মনে পড়ে খেলনা পুতুল দিয়ে সাজানো তার ঝুলনের বাগান, যখন সে সদ্য বিবাহিতা হয়ে আসার পর একলা দুপুরে সাজিয়ে নেয় তার মন খারাপের ঘর। মনে পড়ে, আর মনে পড়ে বলেই আমি-তুমি- আর সব্বাই যাদেরকে নাম দিয়ে চেনা যায় না, তারা বেঁচে আছি। আমাদের বর্তমান, আমাদের এই মুহূর্তের সমস্ত ভালোলাগার মধ্যে রয়েছে আমাদের অতীতের ছায়া। প্রশ্ন উঠতেই পারে, একটি ভ্রমণ কাহিনীর ভূমিকা লেখার সময়, এমন ভাবে সবাইকে নস্টালজিক করে তোলার ঠিক কি কারণ? আচ্ছা, এবার বলেই ফেলি। বর্তমান ম্যগাজিনে প্রকাশিত ভ্রমণ কাহিনীর কথা মনে আছে? কিম্বা স্কুলে পাঠ্যবইয়ে সৈয়দ মুজতবা আলির "যাত্রাপথে"; কিম্বা স্বামী বিবেকানন্দের লেখা ভ্রমণ কাহিনী? আমার কিন্তু বেশ মনে পড়ে আজও। মামার বাড়ি গেলেই টেবিলের ওপর রাখা বইগুলো থেকে তন্ন তন্ন করে ভ্রমণ কাহিনী খুঁজে বেড়াতাম। একটা জায়গা না গিয়েও সেই জায়গায় মানস ভ্রমণের একটা চেষ্টা। ম্যাগাজিনের পাতায় বড় করে ছাপা রঙিন ছবিগুলোতে জায়গা গুলোকে কল্পনা করা; খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সেই ছবির প্রত্যেক অংশকে ফিরে দেখা। হয়তও সেই ভাবনা, সেই ভালোলাগা আজও আমার পিছু নেয়, আমার লেখার অনুপ্রেরণা হয়ে।
ওয়াশিংটন ডিসির নানান প্রান্ত ঘুরে ফেলার পর মন করছিল, আবার প্রকৃতির খুব কাছাকাছি ফিরে যাবার। আসলে, নতুনকে জানার পাশাপাশি স্বাদ ও অভিজ্ঞতা পরিবর্তনেরও প্রয়োজন থাকে। আর সেই জন্যই এইবারে এমন একটি গন্তব্য বেছে নিলাম, যেখানে থামার কোনও প্রশ্নই নেই। অবাক লাগছে? আমরা সবাই যদিও জীবনের এগিয়ে চলার মধ্যেও একই ধারণার প্রতিচ্ছবি দেখি, তবে সত্যি বলতে এবারের ভ্রমণ কাহিনী এমন এক গন্তব্যের প্রতি, যার নেই কোনও দর্শনীয় স্থান; তবু আছে অনেক কিছু- যাত্রাপথে।



হ্যাঁ, যাত্রাপথে। আগে যতবার বেরিয়েছি, ততবার লক্ষ্য থেকেছে কোনও দর্শনীয় স্থানের। কিন্তু এবারে বেছে নিলাম একটা গোটা রাজ্যকে, যা তার অভাবনীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। আর এই রাজ্যেরই এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ঘুরে বেড়ালাম, কাঁচের জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখতে দেখতে। কোনও নামী স্থান নেই, নেই কোনও নির্দিষ্ট দর্শনীয় গন্তব্য, কিন্তু এই যাত্রাপথে আছে সবুজের গালিচায় মোড়া পাহাড়ের পাদদেশ, আছে দিগন্ত বিস্তৃত ক্ষেত খামার, আছে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে দাঁড়িয়ে থাকা গাছের ঘন সারি, আছে হঠাৎ রাস্তার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া স্রোতস্বিনী, আছে রঙিন পাতায় মোড়া রোদ ঝলমলে পাহাড়ি জঙ্গল, আছে টয় ট্রেন, আছে হ্রদের পাশে আচমকা থমকে যাওয়ার মুহূর্ত, আছে পাহাড়ের বুক চিরে এগিয়ে চলা রোলার কোস্টার রোড যা কখনও উঠে গেছে অনেক উঁচুতে, কখনও হঠাৎই খাড়া ঢাল বেয়ে নেমে এসেছে - যার দু পাশের থেকে ছায়ার চাদর নামিয়ে রেখেছে ঘন বন, আর রঙিন গাছের শ্রেণী।



নিউ হ্যাম্পশায়ার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনেকটা উত্তর দিকের রাজ্য- আর সেই জন্য তুলনামূলক ভাবে শীত প্রবণ। গ্রীষ্মের দৈর্ঘ্য এই রাজ্যে বেশ কম। তবে এই রাজ্যের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের মূল আকর্ষণ হল "Fall Color". তবে এই প্রসঙ্গে বলার সময়, আমি "Fall Color" ও এর বিজ্ঞানসম্মত কারণ সবাইকে একটু জানিয়ে দিতে চাই। ভ্রমণ কাহিনী শুধুই জানার বিষয় নয়, বোঝার গুরুত্বও যে মানতেই হবে।



গ্রীষ্মের একেবারে শেষের দিকে, ধীরে ধীরে যখন দিনের দৈর্ঘ্য কমতে থাকে, তখন তা গাছের জীবনচক্রেও প্রভাব ফেলে। গাছের পাতায় সালোকসংশ্লেষের পরিমাণ কমতে থাকে, এবং পাতার মধ্যেই পাতার সবুজ অংশ (অর্থাৎ ক্লোরোফিল) মরে যেতে থাকে। এই ক্লোরোফিল মৃতপ্রায় পাতার বুকের সূর্য কিরণের সাথে ধীরে ধীরে ভেঙ্গে যেতে থাকে। আমরা সবাই জানি সাদা আলো, সমস্ত রঙের আলোর সমষ্টি। ঠিক একই ভাবে, ক্লোরোফিলও সেই আলোর সংস্পর্শে বিক্রিয়ার কারণে নানান রঙের রাসায়নিক যৌগে ভেঙে যায়, এবং সেটাই পাতার রং হলুদ, খয়েরি, ঘন লাল ও পাটল বর্ণ (Purple) করে দেয়। গোটা গাছের পাতা যখন সবুজের সাথে এমন বিভিন্ন আকর্ষণীয় প্রাকৃতিক বর্ণে সেজে ওঠে, তখন তা সত্যিই এক অদ্ভুত মাধুর্য নিয়ে আসে প্রকৃতির বুকে। একটা গোটা উপত্যকা যদি এমনই নানান রঙের বাহারে সেজে ওঠে তাহলে কেমন হবে? যদি চোখ ফেরালেই বারবার অনুমান করার ক্ষমতা হারিয়ে যায় ঝিলমিল রঙিন পাতার মধ্যে দিয়ে আসা রোদ্দুরের দিকে তাকিয়ে? যদি একটা দীর্ঘ ঘন কালো রাস্তার দুই পাশ সেজে ওঠে রংবাহারি অভ্যর্থনায়, তাহলে? এই দেশের আবহাওয়া এই রকম নৈসর্গিক দৃশ্যে অন্যতম ভূমিকা নেয়।



আমাদের যাত্রা শুরু করেছিলাম কানেক্টিকাট থেকে.....আর... (এর পরে কেমন ছিল আমাদের যাত্রা, জানতে হলে চোখ রাখুন আগামী পর্বে)।

আপনাদের এরকম কোনও ভ্রমন অভিজ্ঞতা থাকলে অবশ্যই লিখে পাঠান আমাদের ডাকবাক্সে (info.amarbanglavasa@gmail.com) ছবি সহ।

ধন্যবাদান্তে,
সম্পাদক-নবপত্রিকা

Sunday, November 27, 2016

নবপত্রিকার গল্প

আমাদের পথ চলা শুরু হয়েছিল প্রায় দেড় বছর আগে। ছোট্ট ছোট্ট পায়ে, আমরা এগিয়ে চলেছি, আপনাদের হাত ধরে। আপনাদের ভালোবাসা, প্রেরণা, মতামত আমাদের করেছে উদ্বুদ্ধ। 

আপনাদের সহযোগিতায় আমরা পেয়েছি নতুন লেখা, নতুন ভাবনা। আমাদের ডাকবাক্স ভরেছে আপনাদের কথায়। আমরা অভিভূত, আমরা কৃতজ্ঞ। বাংলা ভাষা কে ভালোবেসে যে চেষ্টা শুরু করেছিলাম, আজ ধীরে ধীরে তা পরিণতি পাচ্ছে আপনাদের সান্নিধ্যে।

তাই আজ ফিরে দেখার সময়। একবার জেনে নেবার সময়, "নবপত্রিকা"-র এগিয়ে চলার গল্প। আমাদের গল্প......



আপনাদের ভালোবাসা, মতামত পাঠাতে পারেন info.amarbanglavasa@gmail.com এ।

ধন্যবাদান্তে,
সম্পাদক-নবপত্রিকা

Sunday, November 20, 2016

যাযাবর- পঞ্চম পর্ব (ওয়াশিংটন ডিসি- তৃতীয় সংখ্যা)


আমি আমার অনেক লেখাতেই সূর্যাস্তের হেলানো রোদ্দুরের উল্লেখ করে থাকি এবং তার একটা বিশেষ কারণ আছে। বহু মানুষের মতে, সূর্যাস্তের মধ্যে একটা "শেষ হয়ে যাওয়ার" অনুভূতি আছে, হয়তও রয়েছে কোনও বিষাদঘন মুহূর্তের স্পর্শ। কিন্তু আমি মনে করি, এ যেন "রজনীর" রূপসজ্জার আভাস; এ যেন ক্লান্তিময় দিনের শেষে একটু ফিরে দেখার সময়; এ যেন প্রিয় মানুষটির হাত ধরে পায়ে পায়ে বালুময় সৈকতে পায়ের ছাপ রেখে যাবার সময়; এ যেন নীরবে একটু আলাদা করে নিজের জন্য সাজিয়ে রাখা সময়; ভালোলাগার সময়। আমার খুব মনে পড়ে, বাগবাজার মায়ের ঘাটের কথা, কারণ আমার অনেক সোনালি বিকেল নীরবে রয়ে গেছে সেই জলছোঁয়া ধাপগুলোর মাঝে। আমি সত্যিই খুব ভালবাসি যখন বর্ণালী রোদ্দুর দিনের শেষ নিঃশ্বাস নেবার আগে স্বর্ণাভ আলোয় ভরিয়ে দেয় চারিদিক; যখন সেই আলো সারি সারি ইটের জঙ্গলের বুক বিদীর্ণ করে এসে পড়ে কোনও গল্প-ঠাকুমার বারান্দায়, ভাঙা চোরা চিলেকোঠায় কবে যেন তুলে রাখা সাইকেলের ওপর, বিছানায় মায়ের পাশে ঢুলু চোখে পড়তে বসা ছোট্ট মেয়ের "অ আ ক খ" বইয়ের ওপর, "প্রিয় মানুষটার" ফিরে আসার অপেক্ষায় সাজঘরে বসে থাকা কোনও রূপসীর আয়নায়, "হেই মারো, মারো টান" বলে ঘর ফেরা মাঝির এঁটো ভাতের থালায়, অথবা সদ্য ভেঙে যাওয়া সম্পর্কের স্মৃতিতে গালের ওপর নেমে আসা কোনও নামহীন অশ্রুর ওপর। আমার কাছে তাই একমুঠো রোদ্দুর মানেই নস্টালজিয়া, সহস্র গল্পের গুঞ্জন, আমার কৈশোরের গন্ধ, আমার ভালোলাগা।





তাই সেই ভালোলাগা নিয়েই পায়ে পায়ে চলতে চলতে সূর্যাস্তের রোদ্দুর মেখে পৌঁছে গেলাম Washington Monument। একেবারে মধ্যস্থলে অবস্থিত এই স্থাপত্যকে সত্যিই এই শহরের "নিশান" বলা যেতে পারে। গাড়িতে করে এই শহরে আসার সময় বহু দূর থেকেই এটিকে দেখতে পাওয়া যায়, এর সুবিশাল উচ্চতার জন্য। ফুটপাতে চলতে চলতে পায়ের আঙুল জড়িয়ে ধরল সবুজালি ঘাসের চাদর। আগের সংখ্যাতেই বলেছিলাম এই শহরের সবুজ- প্রেমের কথা। আর এই বার বলব, সেই সবুজ মেখে ঘুরে বেড়ানোর গল্প। একটা সরু বাধানো রাস্তা চলে গেছে প্রশস্ত প্রান্তরের মধ্যে দিয়ে, কিন্তু সত্যিই ঘাসের আদর মেখে চলার স্বাদই ছিল অন্য রকম। এক সবুজ প্রান্তরের মধ্যস্থলে রয়েছে এই স্তম্ভ। যতই এগোতে থাকলাম, এর উচ্চতা করতে থাকল স্তম্ভিত। আর পশ্চিমের সূর্য তখন শেষ বেলার রোদ্দুরের পসরা সাজিয়ে দিয়েছিল সেই স্তম্ভের বুকে। ঠিক মনে হচ্ছিল, কোনও স্বর্ণকার যেন তার স্বাক্ষর রেখে গেছে এই স্থাপত্যের মধ্যে। পাদদেশের অংশটি আদতে একটা বাঁধানো চত্বর, যেখানে দাঁড়িয়ে বেশ কিছু ক্ষণের জন্য চুপ করে গেছিলাম, আশ্চর্যের আবেশে। এই চত্বরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল উৎসাহী মানুষের ভিড়। কারো কাছে সাইকেল রেখে একটু বিশ্রাম নেবার মুহূর্ত, কারো কাছে ঘাসের বিছানায় হেলান দিয়ে বই পড়ার সুযোগ, কারো বা একটু একান্ত সময় প্রেয়সীর সাথে, কারো কাছে শুধুই ফ্রেম বন্দী কিছু মুহূর্ত।




এই স্থাপত্যের পাদদেশ থেকে সোজাসুজি দেখতে পাওয়া যায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও আব্রাহাম লিঙ্কনের স্মৃতি সৌধ। আর এর বিপরীত প্রান্তে আছে শুভ্র United States Capitol। সবুজের গালিচা পেরিয়ে এসে পৌঁছলাম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতি সৌধের কাছে, যা এই দেশের ইতিহাসে যথেষ্ট গুরুত্ব রাখে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ গ্রহণ ও জয়লাভের সাথে জড়িয়ে আছে মিত্রশক্তির অন্তর্ভুক্ত সমস্ত দেশের সৈনিক ও শহীদের উপকথা। এবং সেই আত্ম বলিদানকে স্মরণে রেখেই এই সৌধ নির্মাণ করা হয়েছিল। এখানে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ টি রাজ্যের ও যুদ্ধের সময় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অংশ নেওয়া সমস্ত মিত্র দেশের স্তম্ভ। এই সৌধের মাঝখানে রয়েছে একটি সুন্দর ফোয়ারা। গোলাকৃতির এই সৌধের মধ্যে চোখে পড়ল যুদ্ধে অংশ নেওয়া তৎকালীন ভারতীয় সৈনিকদের জন্য নির্মিত শ্রদ্ধারঘ্য।





রোদ্দুর তখন প্রায় শেষের পথে, আর শহরের কানায় কানায় তখন রোশনাই জ্বলে ওঠার প্রস্তুতি। কিন্তু তারই মাঝে কিছুটা সময় যেন আমায় থেমে যেতে হল, আকাশের বুকে ছড়িয়ে পড়া রক্তিম ছটার রূপ দেখার জন্য। গঙ্গাপাড়ের বিকেলের থেকে এই রঙের খেলা সত্যিই অনেকটা আলাদা। যখন সে রক্তিম আভা এসে পড়ছিল সৌধের সামনের সুদীর্ঘ আয়তকার জলাশয়ের ওপর, তখন মনে পড়ছিল আমার পুরনো স্কুল ব্যাগে রাখা রং তুলির বাক্সের কথা। প্রকৃতি যেন শিশুসুলভ ভঙ্গিমায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলেছে রং সারা শহরের বুকে। ধীর পায়ে এসে পৌঁছলাম আমার এই শহরের অন্তিম গন্তব্য স্থলে- আব্রাহাম লিঙ্কনের স্মৃতি সৌধ। আব্রাহাম লিঙ্কন হলেন মার্কিন সভ্যতা ও রাষ্ট্রের ঈশ্বর। গণদেবতা। প্রত্যেক রাষ্ট্রই ঐতিহাসিকভাবে কোনও কোনও ভাবে এক বা একাধিক গণ নায়ককে পেয়েছে, যাদের হাত ধরে সমাজ, সভ্যতা ও গণতন্ত্র পেয়েছে আধুনিক রূপ।কখনও তা এসেছে স্বাধীনতা হয়ে , কখনও বা গণতন্ত্রের অভ্যূত্থান হয়ে। মহাত্মা গান্ধী, মাও-সে-তুং, শেখ মুজিবর রহমান, লেনিন- স্ট্যালিন, নেলসন ম্যান্ডেলা এর মতো জগতখ্যাত মানুষের পাশাপাশি আব্রাহাম লিঙ্কন সমান আসনে উপবিষ্ট। এই সৌধকে তাই "মন্দির" বলা হয়ে থাকা স্থানীয় ভাষায়, এই মহান ব্যক্তির প্রতি ভাবাবেগের কারণে। তাঁর মূর্তির চারিপাশের দেওয়ালে লেখা রয়েছে, তাঁর ব্যক্ত নানান তত্ব, যা আদতে এই দেশের আদর্শের মূলগত ভিত্তি।

সন্ধ্যা নামল অবশেষে। আর এবার আমার বাড়ি ফেরার পালা। তবে আমার যাযাবর মন আবার খুঁজে নেবে নতুন কোনও শহর, নতুন কোনও গন্তব্য। তাই, ক্লান্ত পায়ে যখন ফিরে তাকালাম শহরের দিকে, তখন সত্যিই মন ভরে গেল এক অদ্ভুত ভালোলাগায়। মনে মনে বললাম, "আবার দেখা হবে..."

আপনাদের এরকম কোনও ভ্রমন অভিজ্ঞতা থাকলে অবশ্যই লিখে পাঠান আমাদের ডাকবাক্সে (info.amarbanglavasa@gmail.com) ছবি সহ।

ধন্যবাদান্তে,
সম্পাদক-নবপত্রিকা

Sunday, November 13, 2016

যাযাবর- পঞ্চম পর্ব (ওয়াশিংটন ডিসি- দ্বিতীয় সংখ্যা)


গল্পটা যেখানে অপূর্ণ রেখেছিলাম, সেখান থেকেই আবার শুরু করছি। আজ দ্বিতীয় সংখ্যা


দুপুরের রোদ্দুর মেখে ঘুরে দেখছিলাম বিশ্ব রাজনীতির রাজধানী Washington, D.C. । বিগত বেশ কয়েকদিনে আমার, আপনার পাশাপাশি গোটা বিশ্বের চোখ ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ওপর। আর সেই সূত্রেই বলতে চাই, যে শহরের বুকে সেই ক্ষমতার অলিন্দ অবস্থিত, তারই নাম Washington, D.C। হয়তও এই কথাটার পর এই শহরের ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক গুরুত্ব আঁচ করাই যেতে পারে। তবে এ শুধুই রাজনীতি-বাণিজ্য আর ক্ষমতার দর্প দেখানোর শহর নয়, বরং এই শহর প্রেমের, ঐতিহ্যের, কলা ও শিল্পের, বিজ্ঞান ও আধুনিক জীবন চর্চার। নানান স্থাপত্য ও কারুকার্যে মোড়া এই শহরের বিভিন্ন প্রান্ত।



হাঁটতে হাঁটতে এসে পৌঁছেছিলাম একটি সুদৃশ্য বাগানে। সুন্দর সুসজ্জিত এই বাগানের নানান প্রান্তে রয়েছে শৈল্পিক ভাস্কর্য। আর একেবারে মধ্যস্থলে আছে একটা সুন্দর ফোয়ারা, যেখানে সময়ের সাথে সাথে তার আকার পরিবর্তিত হয়ে যায়। আমার মনে আছে এমন অনেক বিকেলের কথা, যখন গঙ্গার ঘাটে জলের মধ্যে পা ডুবিয়ে বসে থাকতাম, জিন্স গোটানো হাঁটু অবধি। পাশে রাখা চটি জুতো। আর এভাবেই স্রোতের আনাগোনা দেখতে দেখতে কখন সময় কেটে যেত, ভেবেই পেতাম না। জেটিঘাট, লঞ্চের মাথা থেকে ছেলেদের ঝাঁপ, সন্ধ্যের লঞ্চে ঠাসাঠাসি ভিড়, সূর্যাস্তের মিঠে হাওয়া আরও কতও কিছু থাকত মনকে আঁকড়ে রাখার জন্য। ঠিক অনেকটা সেইরকমই এখানে লক্ষ্য করলাম; দেখলাম বেশ কিছু পর্যটককে ফোয়ারার জলে পা ডুবিয়ে বসে আড্ডায় মেতে থাকতে। কারো হাতে আবার রয়েছে গল্পের বই, নেহাত অবসর কাটানোর জন্য।



এইভাবে শহর ঘুরে দেখার সাথে আমার খুব মনে পড়ে কুমারটুলির অলিগলির কথা। সাহিত্যের নিরিখে দুই সভ্যতা, দুই শহর, দুই ইতিহাস ও তার শিল্পসুলভ নিদর্শন একেবারেই আলাদা, তা সত্বেও এই তুলনা টেনে আনলাম। এই তুলনার এক ও একমাত্র কারণ হল "অনুভূতি"। এই অনুভূতি আমায় সেই পুরনো দিনগুলোর কথা ভীষণ মনে করায়। এখন আমাদের কোলকাতা শহরের বুকে ক্যামেরা পন্থী DSLR-ধারীদের খুব ভিড়, এবং মার্জনা চেয়ে আগেই বলে রাখি, আমি এই ভিড়ের মধ্যে পড়িনা। আমার কাছে ঘুরে দেখা মানে, মনের তৃপ্তি, চিত্তের অনুভব। আর সেই কারণেই খালি হাতেই বেড়িয়ে পড়তাম "নতুন" কিছু পাবার নেশায়। আঁকাবাঁকা কুমারটুলির গলিতে খুঁজে পেতাম- গুমটির টিমটিমে আলোতে তুলির আঁচড়ে ফুটে ওঠা প্রতিমার রূপ, কোথাও অসম্পূর্ণ কাঠামোয় নতুন মাটির প্রলেপ, কোথাও স্টুডিয়োতে প্লাস্টার অফ প্যারিসের তৈরি মূর্তির সারি, কোথাও ঠেলাগাড়িতে করে আনা নরম মাটির স্তূপ, কোথাও রকমারি ঠাকুর সাজানোর রং বেরঙের সরঞ্জাম, কোথাও প্যান্ডেলের কর্তাদের বায়না করার ব্যস্ততা, কোথাও কাঁধের ওপর বসানো প্রতিমা, কোথাও বা তুলি কলম হাতে বাবার পাশে বসে মন দিয়ে "ঠাকুর গড়া" দেখতে থাকা খুদে-শিল্পী। এক কথায় বলতে গেলে, কিছু জিনিস এই জীবনে সত্যিই ক্যামেরার লেন্সে বন্দী করা যায়না। আর ঠিক সেই রকম অনুভূতির সন্ধান পেলাম এই শহরের বুকে "চলতে চলতে"।


আমার খুব ভালো লাগে শহরের বুকে একমুঠো সবুজের আহ্বান। গড়ের মাঠ যেমন কোলকাতার ফুস্ফুস, ঠিক অনেকটা সেই রকম ঘন সবুজ প্রান্তর চোখে পড়ার মতো বিভিন্ন দিকে, এই শহরের বুকেও। এ যেন, আধুনিক নগরজীবনের মধ্যেও সবুজের নিঃশ্বাস। সেই সবুজ মাঠের ধার দিয়ে রয়েছে বাধানো রাস্তা। বাগান থেকে বেড়িয়ে সেই রাস্তা ধরেই হাঁটতে শুরু করলাম। এভাবে চলতে চলতে এসে পৌঁছলাম সেই বাড়ির সামনে, যা হল মার্কিন রাষ্ট্রপতির বাসভবন। White House। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বেষ্টনীতে মোড়া এই বাড়ির সমস্ত দিক, এমনকি সামনের গেটে সেনাবাহিনীর নিরন্তর টহল। রেলিং থেকে সোজাসুজি দেখা যায় এই বাড়ির মূল প্রবেশ দ্বার, ও সামনের সুসজ্জিত বাগান। ছোটবেলায় রাজপ্রাসাদ, সাম্রাজ্য, রাজা-রানীর অনেক গল্প শুনতাম; আর এই বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে মনে হল, "গল্প হলেও সত্যি"। প্রাসাদের থেকে কম কিছু নয় এই বাড়ি, যার সম্পর্কে সাধারণ মানুষের কৌতূহল ও রহস্য একেবারেই কম নয়। জানা যায়, এই বাড়ির বাসিন্দা ও কিছু অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছাড়া কারোর জানা নেই এর অন্তরমহলের কথা।



এই বাড়ির সামনে থেকে এবার একটু একটু করে এগোতে থাকলাম এই শহরের সেই "সরলরেখার" দিকে। সেই সরলরেখা যা ঐতিহাসিক চারটি স্থাপত্য কে সংযোগ করে। বিকেলের মিঠে আলো তখন তির্যক হয়ে এসে পড়ছে রাস্তার বুকে। কখনও গাছের আড়াল পেরিয়ে উঁকি দেওয়া বিশাল অট্টালিকা, কখনও বা ব্রোঞ্জের তৈরি মূর্তি ও ঐতিহাসিক স্মারক, কখনও বা দূর বাঁকের মধ্যে থেকে এসে পড়া সোনালি রোদ - এই সব কিছুই রেখে যাবে অজস্র ভালোলাগা। তাই Washington Monument পৌঁছানোর আগে মাঝে মাঝেই থেমে যেতে হল, মুহূর্তদের সন্ধানে।

অবশেষে এসে পৌঁছলাম সেই প্রান্তরের সামনে যার মাঝখানে আছে Washington Monument। আঁকাবাঁকা সরু পথ এগিয়ে গেছে সেই প্রান্তরের মধ্যমণির দিকে। আর......

হ্যাঁ, গল্প আড্ডা আর জানার অনেক কিছু আরও আছে। তবে আজ এই সংখ্যায় এই টুকুই। কেমন ছিল সেই Washington Monument আর সূর্যাস্তের সময় Lincoln Memorial ঘুরে দেখার অভিজ্ঞতা? জানতে গেলে চোখ রাখতে হবে আগামী সংখ্যায়।

আপনাদের এরকম কোনও ভ্রমন অভিজ্ঞতা থাকলে অবশ্যই লিখে পাঠান আমাদের ডাকবাক্সে (info.amarbanglavasa@gmail.com) ছবি সহ।

ধন্যবাদান্তে,
সম্পাদক-নবপত্রিকা

Thursday, November 3, 2016

যাযাবর- পঞ্চম পর্ব (ওয়াশিংটন ডিসি- প্রথম সংখ্যা)

বাসের জানালার সিট কার না প্রিয়? সেই কোন ছোটবেলা থেকে বাসে-ট্রামে যখনই উঠেছি, মন করেছে সেই সিটে কখন একবার বসা যায়। আমাদের মন কখনও আবদ্ধ থাকতে চায়না। আর সেই জন্য ওই জানালাটাই গন্তব্যে পৌঁছানোর আনন্দের থেকেও আরও বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। একমুঠো বাতাস, আর শহরের বুক বেয়ে এগিয়ে চলা রাস্তার ছবি, যা গতির সাথে ক্রমাগত পিছিয়ে যেতে থাকে। একই রাস্তা, একই জায়গা, একই গন্তব্য তবুও যেন আশ মেটে না; তার হয়তও একটাই কারণ- তন্ন তন্ন করে আমরা "নতুন" কিছু খুঁজি আমাদের "চেনা" সব কিছুর মধ্যে। নতুন মানেই তো সবুজ, নতুন মানেই তো ইচ্ছে, নতুন মানেই তো জীবনের স্বাদ। আচ্ছা, কখনও ইচ্ছে হয়েছে পায়ে হেঁটে রমণীয় কোলকাতার আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়াতে? বাগবাজারের ব্যোম কালীতলার মন্দির, স্টেশনের ধারে মায়ের ঘাট, নিঝুম কুয়াশা ঘন ভোরে জেটিঘাটে বসে এক কাপ উষ্ণ চা, কিম্বা চলতে চলতে ট্রামলাইনের আঁকিবুঁকি? অথবা নবরুচির জলখাবার খেয়ে হাঁটা পথে শোভাবাজারের ব্যস্ত বাজারের পথ? আমাদের শহর কেন্দ্রিক জীবনে এমন অনেক ছোট ছোট ভালোলাগা আছে, যা হয়তও কাছ থেকে না দেখলে, বৃথা। তাই যখন ভীষণ মন করেছে, বাসের জানালায় বসে দেখা শহরটাকে আরও কাছে টেনে নিতে, আমি নেমে এসেছি রাস্তায় আর যাযাবরের মতো পায়ে হেঁটে ঘুরে বেরিয়েছি আমার উত্তর কোলকাতার এখান সেখান।

এইবারে যে শহরটায় গেছিলাম, সেইখানে গিয়ে তাই সব চেয়ে বেশি মনে পড়ল আমার নিজের শহরের কথা। মার্কিন মুলুকে অধিকাংশ শহরই তার জাঁকজমক ও দর্শনীয় স্থানের জন্য বিখ্যাত। তবে এই শহরটি এই দেশের বুকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্বেও একেবারেই আলাদা। এই শহর আপনাকে বাধ্য করবে "পায়ে পায়ে" নানান প্রান্ত ঘুরে দেখতে। ছোট ছোট প্রান্ত, পাড়া, অলিগলি, সুসজ্জিত রাস্তা যা সত্যিই পায়ে হেঁটে না দেখলে তার আকর্ষণ অনুভব করা যাবে না। আর হয়তও এই কারণেই আমার "কোলকাতা -ময়" সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল, যখন সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়তাম আমার আশেপাশের "নতুন" কিছুর খোঁজে। 


গত দিনের আলোচনা পড়ে, যদি কোনোভাবে মনে হয়, "এই অরণ্য বিলাসী" মানুষটি হঠাৎ কেন শহরের খোঁজে ঘরছাড়া হয়ে গেল এত তাড়াতাড়ি, তবে সেই কৌতূহল নিরসন করতে শুধু একটা কথাই বলব, "সৌন্দর্য"। এই শহর বিশ্ব রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে সদর্পে। খাস মার্কিন মুলুকের রাজধানী, ওয়াশিংটন ডিসি (Washington, D.C.)। এই রাজধানীর আনাচে কানাচে ঘুরে কেটে গেল একটা সুন্দর রোদ্দুরভেজা দিন। পায়ে পায়ে সেই অলিগলি ঘোরার গল্পই এবার শোনাবো সবার কাছে।আজ প্রথম সংখ্যা।


প্রায় দুপুর দুপুর যখন পৌঁছলাম একটা জায়গায়, যাকে এই শহরের প্রাণকেন্দ্র বলা যেতেই পারে। United States Capitol। এই ইতিহাস খ্যাত বাড়িটির গুরুত্ব বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতিতে ব্যপক। এটিই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক দপ্তর, যেখানে  United States Congress এর আসন আছে। শুধু মার্কিন প্রেসিডেন্ট নয়, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনেতারাও এই দপ্তরে সম্বর্ধনা গ্রহণ করে স্বাগত ভাষণ রেখেছেন। এই দপ্তরের কার্যকারিতার সাথে আমাদের ভারতীয় পার্লামেন্টের তুলনা চলতে পারে। শুভ্র এই প্রকাণ্ড প্রাসাদোপম বাড়ির ওপর যখন হেলানো রোদ্দুর এসে পড়ছিল, তখন মনেই হয়নি গাছের ছায়ায় বসে কিভাবে অনেকক্ষণ কেটে গেছে। তথ্য হিসাবে বলে রাখতে চাই, এই বাড়ির অধিকাংশ অংশই সাধারণ মানুষের জন্য বন্ধ,নিরাপত্তার কারণে।


এই শহরের সব চেয়ে বড় চারটি স্থাপত্য হল, United States Capitol, Washington Monument, World War II Memorial এবং Lincoln Memorial। এবং এই চারটি স্থাপত্য তাদের ঐতিহাসিক গুরুত্বের কারণে "একই সরল রেখায় অবস্থিত"। তাই United States Capitol এর সামনে থেকে বাকি তিনটি স্থাপত্যকে সোজাসুজি দেখা যায়, যা সত্যিই বিস্ময় জাগায়।


United States Capitol এর সামনে থেকে এবার এগোতে থাকলাম Washington Monument এর দিকে। এবং সেই চলার পথে বেশ কিছু এমন জিনিস চোখে পড়ল, যা লক্ষণীয়। এই শহরের পথে যেটা ভীষণ চোখে পড়ে, তা হল বিভিন্ন ঐতিহাসিক ভবন ও মিউজিয়াম। ইতিহাস, বিজ্ঞান, ভূগোল ও মহাকাশ বিদ্যা, কলা ও শিল্প, ভাস্কর্য এই প্রত্যেক বিষয়ের আলাদা আলাদা জাদুঘর ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এই শহরের বুকে। 



এখানকার রাস্তা, মোড়, পথচারীদের চলার জায়গা সবকিছুই বেশ শহুরে ভাবনার থেকে আলাদা, বরং অনেক বেশি শৈল্পিক। সাধারণত বেশিরভাগ শহরের রাস্তা কোণাকুণি বিস্তৃত থাকে, কিন্তু এখানে তার অধিকাংশই তির্যক! যাকে বলে, সোজা রাস্তা মেলা ভীষণ ভার।বাসভবনের সংখ্যা মূল শহরের বুকে কম হলেও, সেখানে ক্যাথলিক চার্চএর শিল্প শৈলীর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। এই দেশে খুব চলতি কথা হল Uptown and Downtown। Uptown এর অর্থ সাধারণত নিরিবিলি পাহাড়ি এলাকা, যেখানে বসতি বেশ কম। তবে Downtown বেশ জাঁকজমক পূর্ণ শহর হয়, কারণ সেখানেই নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় সবকিছু মেলে। এই শহরের Downtown এই আমি এসেছিলাম।



বেলা গড়াতে যখন শুরু করল, তখন এইভাবে ঘুরতে ঘুরতে, এক সময় চলে এলাম এক পার্কে; শহরের উপকণ্ঠে এক সুদৃশ্য বাগান। আর.....................

হ্যাঁ, গল্প আড্ডা আর জানার অনেক কিছু আরও আছে। তবে আজ এই সংখ্যায় এই টুকুই। কেমন ছিল সেই পার্কের নানান প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা শিল্প ভাস্কর্য? কেমনি বা ছিল সেই পায়ে পায়ে Washington Monument পৌঁছে যাবার অভিজ্ঞতা? জানতে গেলে চোখ রাখতে হবে আগামী সংখ্যায়। 

আপনাদের এরকম কোনও ভ্রমন অভিজ্ঞতা থাকলে অবশ্যই লিখে পাঠান আমাদের ডাকবাক্সে (info.amarbanglavasa@gmail.com) ছবি সহ।

ধন্যবাদান্তে,
সম্পাদক-নবপত্রিকা

Wednesday, October 26, 2016

যাযাবর- চতুর্থ পর্ব (রামাপো উপত্যকা)

এবারের "বেরিয়ে পড়া" টা একেবারেই ধরাবাঁধা গতে ছিল না। না ছিল কোনও পরিকল্পনা, না ছিল কোনও তথ্য। শুধু ছিল, শহরের ভিড় থেকে একটু "দূরে কোথাও" যাবার ইচ্ছে। বা আরও স্পষ্টভাবে যদি বলতেই হয় তবে, একটু নির্জনতা খুঁজছিলাম প্রকৃতির ভীষণ কাছে। আমার মনে পড়ে যায়, ছোটবেলায় পাঠ্য বইয়ের পাতার রঙিন ছবি দেখে আনমনা হয়ে যাওয়া দুপুর গুলোর কথা, যখন খেয়ালি হাওয়া হঠাতই এসে উল্টে দিত বইয়ের পাতা, আর আমার শিশু মনকে ভাসিয়ে নিয়ে যেত কোনও অচেনা অজানার মাঝে। খুব ইচ্ছে করত, এই একান্ত নীরবতায় হারিয়ে যেতে কল্পনার সাম্রাজ্যে। আর সেই ঘোর তখন কাটত যখন মনে পড়ত, "রাত পেরলেই পরীক্ষা, পড়া শেষ করতে হবে"। আসলে নীরবতাও কিন্তু অনেক সময় হয়ে যেতে পারে আমার আপনার একান্ত সঙ্গী। আদতে, এটা হল একটু সময় নিজের সাথে কথা বলার, তাই না?



ঠিক তাই। আর এভাবেই একদিন বিকেলে বেরিয়ে পড়লাম, নিরুদ্দেশে। যদিও এমন "মতি" নেই বেশি দূর যেতে হয়নি। নিউ জার্সির মধ্যেই খুঁজে পেলাম এক দারুণ পাহাড়ি উপত্যকা যেখানে একই সাথে রয়েছে পাথুরে রাস্তা, ঘন অন্ধকারাচ্ছন্ন জঙ্গলের হাতছানি, সুপ্ত পাষাণের কোল ঘেঁষে শির শিরে শব্দে বয়ে যাওয়া লুপ্ত স্রোতস্বিনী, কোথাও বা ছোট্ট দুর্গম ঝর্ণা, সর্পিল আঁকাবাঁকা রাস্তা , সবুজের সাজে সুসজ্জিত বিশাল দীঘি আর............ভীষণ নির্জনতা। জায়গাটার নাম "রামাপো উপত্যকা"।



উপত্যকায় প্রবেশ করতে গেলে যেতে হয় পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তা দিয়ে, যা কখনও উঠে গেছে খাড়া ঢাল বেয়ে, কখনও বা বেঁকে গেছে জঙ্গলের অন্ধকারে। হয়তও এক একটা বাঁকের পরই লক্ষ্য করা যাবে গভীর ঢাল। আমি শুরু করলাম একেবারে পাদদেশের সমতল এলাকা থেকে যেখানে ক্যামেরা নিয়ে থমকে যেতেই হয় সুদৃশ্য দীঘি ও জলাশয়ের সামনে। কোথাও পাহাড়ের ঢাল একেবারে নেমে এসেছে দীঘির পাড়ে, কোথাও বা ঘন জঙ্গলের অন্ধকার বুনে দিয়েছে রহস্যের নকশী কাঁথা। এমনই একটি দীঘির পাড়ে রাখা বেঞ্চের দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছিল, যদি এখানে বসেই নামহীন কোনও অলস দুপুর কেটে যেত আমার। আরও এগোতেই চোখে পড়ল বন্য জীব জন্তু সম্পর্কে সতর্ক বাণী। বিশেষত এই জায়গায় বৃষ্টির মরশুমে সাপের উপদ্রব হয়ে থাকে।




ধীরে ধীরে শহুরে পিচের সোজা রাস্তা পরিণত হল পাথুরে কাঁকড়ে আকীর্ণ ঘোরালো উঁচু নিচু বনপথে। দুপুর গড়িয়ে যদিও তখন বিকেল, তবুও হেলানো রোদ্দুর কেমন যেন আবছা হয়ে গেল সবুজালি পাতার ভিড়ে। রাস্তার দুই পাশে প্রকান্ড গাছের সারি যা অনেকটা স্নিগ্ধ ঘন ছায়ায় মুড়ে রেখেছে জঙ্গলের নিভৃত রহস্য। আরেকটু গভীরে যেতেই বুনো নাম না জানা পাখিদের কিচিরমিচির কানে এল, যা প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল নানান প্রান্ত থেকে। আর কিছুটা এগোতে চোখে পড়ল একটা ছোট সাঁকো, যার নীচে দিয়ে বয়ে চলেছে ছোট একটা প্রবাহ। যেন সভ্যতা ও বন্য জীবন এক সংযোগ স্থল। প্রবাহ এই কারণেই বললাম যে, নিউ জার্সিতে এমন প্রবাহের সংখ্যা অগুনতি, যার কয়েকটি পরে ছোট নদীর রূপ নিয়েছে। বাকি প্রবাহ গুলি এইসব স্থানীয় নদী, উপনদী অথবা হ্রদের সাথে সংযুক্ত। এই উপত্যকার শেষ প্রান্তে আছে একটি বিশাল জলাধার ও একটি ছোট বাঁধ যা এই জলকে নিয়ন্ত্রণ করে।



সেই শেষের দিকেই আরও এগোতে বুঝতে পারছিলাম যে, রাস্তার ঢাল অনেকটা বেড়ে গেছে। এক একটা পদক্ষেপ সমতল থেকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে একেবারে পাহাড়ের উপরের দিকে। এমন আঁকাবাঁকা রাস্তায় চলতে চলতে থেমে যেতে হয় ঘন অরণ্যের শব্দ শোনার জন্য। যদি এক মুহূর্তের জন্য নিঃশ্বাস চেপে চোখ বুজে ফেলা যায়, তাহলে শোনা যাবে পাতার মড়মড় শব্দ, কোথাও বা জল্ধারার কলকল, কোথাও এলোমেলো বাতাসের হিস হিস, কোথাও পায়ের তলায় ছড়িয়ে থাকা কাঁকড়ের শব্দ, কোথাও বন্য জন্তুর যাওয়া আসার শব্দ। আবার কোথাও থমকে দাঁড়িয়ে পড়তে হয় শব্দের উৎস খোঁজার জন্য। জলের ধারার শব্দ খুঁজতে খুঁজতে জানতে পারলাম, পাহাড়ের ঢাল বেয়ে অনেকটা গভীরে এক জায়গায় পাতার আড়ালে রয়েছে একটা সরু ঝর্ণা। এক কথায় রোমাঞ্চকর।


শেষ প্রান্তে পৌঁছলাম যখন তখন সন্ধ্যা নামছে। বেশ কিছুক্ষণ তৃপ্তির স্বাদ নিয়ে সময় কাটিয়ে তারপর প্রায় অন্ধকার হয়ে আসা জঙ্গলের রাস্তা দিয়ে নেমে এলাম একেবারে পাদদেশের শহুরে উপকন্ঠে।

আপনাদের এরকম কোনও ভ্রমন অভিজ্ঞতা থাকলে অবশ্যই লিখে পাঠান আমাদের ডাকবাক্সে (info.amarbanglavasa@gmail.com) ছবি সহ।

ধন্যবাদান্তে,
সম্পাদক-নবপত্রিকা